দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রতিটি খাতে (সরকারি-বেসরকারি, এনজিও) বাধ্যতামূলক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিয়োগে জন্য পদ রাখার দাবি জানিয়েছেন হোমিও চিকিৎসকরা।
হোমিওপ্যাথির জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের ২৭০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর গ্র্যান্ড আজাদ সেন্টারে ইনো হেলথ অ্যান্ড হোমিও ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র আয়োজিত এক সায়েন্টিফিক সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) এ কে এম সোহেল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম কবির, হোমিও চিকিৎসক ডা. এম এ কাদের, ডা. মো. রাশিদুল হক, ডা. আরিফুর রহমান মোল্লা, ডা. নাজমুল হাসান জামসন, ডা. নজরুল ইসলাম ভুইয়া, ডা. আলতাফ হোসেন এবং ডা. শাহীন মাহমুদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, হোমিওপ্যাথি একটা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাব্যবস্থা। সব বয়সের ও সব রোগের জন্যই এটা উপযোগী। দেশের চল্লিশ ভাগ মানুষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপেও একাধিকবার এটাই প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদের খুব সহজেই কাছে পাচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসা খরচ স্বল্পমূল্যে থাকার কারণে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বেশ জনপ্রিয়।
তারা বলেন, রোগীকে অল্প ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তোলাই হোমিওপ্যাথির মূলমন্ত্র। তবে ডাক্তারদের মধ্যে পেশাগত অহমিকা, লোভ, হিংসা ইত্যাদি ও মাল্টিন্যাশনাল ড্রাগ কোম্পানিগুলি হোমিওপ্যাথিকে তাদের স্বার্থের পরিপন্থি মনে করে ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে এবং বর্তমানেও তার ধারাবাহিকতা দৃশ্যমান রেখেছে। এ মনোভাব থেকে বের হয়ে চিকিৎসা, পরামর্শ, প্রস্তুতি ও গবেষণা মূলক কার্যক্রমে অবশ্যই হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ টিম অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
হোমিও বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের স্বাস্থ্য সেবাখাতের উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের জন্য কমপক্ষে একটি পদ সৃষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং এইচপিএনের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/ ইন্সটিটিউট হালনাগাদ করণ, পরীক্ষাগ্রহণে আধুনিকায়ন, সিলেবাস ও পাঠ্যক্রম পূণর্মূল্যায়ন এবং বিশেষায়িত ও উপবিশেষায়িত চিকিৎসকদের জন্য হোমিওপ্যাথিক পদ সৃষ্টি করতে হবে।
তারা বলেন, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ সরকারি পর্যায়ে মাত্র একটি। আর আসন সংখ্যা মাত্র ৫০টি। নতুন সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আসন সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ জরুরী। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ১টি করে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে হবে।
তারা আরও বলেন, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রসূতি মায়েদের অপুষ্টি মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্যক্রমে অংশগ্রহণের মধ্যমে সহায়তা করতে পারে। বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা সার্বিকভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এসডিজি এমডিজি বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা, বিভিন্ন ধরনের নতুন রোগও বিদ্যমান রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা ও নিয়ন্ত্রণ, দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, সেবার মান উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা আগ্রহী। যেখানে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে অন্যান্য চিকিৎসকরা অবস্থান করতে অনাগ্রহী সেখানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরাই হতে পারে সর্বোত্তম বিকল্প।
মন্তব্য করুন