হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য সরকার প্যাকেটজাত খাবারে চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট পরিমাণ উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এতে মোড়কজাত খাবারের এ সংক্রান্ত তথ্য, অসংক্রামক রোগ কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স হলে এক আলোচনায় সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বিএমইউ ও সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপিএ যৌথভাবে আয়োজিত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মোড়কজাত খাদ্যের উপাদান সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, দ্রব্যের মোড়কে চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ইত্যাদির মাত্রা সুস্পষ্টভাবে লেখার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যাতে নিরক্ষর ক্রেতারাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য চিহ্নিত করতে পারে। খাদ্যে কোন দ্রব্যের মাত্রা কতটুকু হবে, কীভাবে হবে এবং কোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হবে তা সুস্পষ্ট করা জরুরি। এছাড়া এসব বিধান বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং, সমন্বয় এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স প্যাকেজিং এবং লেবেলিং বিষয়ক গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এবং চিপসে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কবাণী নেই। প্যাকেটে মোটিভেশনাল বিভিন্ন শব্দের উপস্থিতি রয়েছে। মার্কেটিং সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রায় শতভাগ দোকানে চিপস এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়ের বিজ্ঞাপন রয়েছে। ৭০ শতাংশ দোকানি অতিরিক্ত বিক্রির জন্য কমিশন পায়, ৫২ শতাংশ দোকানে ব্র্যান্ডের ফ্রিজ এবং ৩৬ শতাংশ দোকানে সাইনবোর্ড রয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি। খাবারের নামে বিষ কিনে খাচ্ছি কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। দেশে রোগ বাড়ছে, তাই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, সরকার মোড়কজাত খাবারে চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক তথ্য যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. খালেকুজ্জামান রুমেল বলেন, গবেষণায় পাওয়া যায় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত কিছু পানীয়তে দাঁতের ক্ষতি হয় এমন সব উপাদান পাওয়া গেছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোয়েব বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন একটি শক্তিশালী আইন। এ আইনের আলোকে মোড়কজাত প্রবিধানমালা করা হয়েছে। তবে আমাদের গবেষণার দেখা যায়- অনেক ব্যবসায়ী এ বিধিমালা মেনে চলছেন না। ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং করার বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আতিকুর হকের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউভেটরের রুহুল কুদ্দুস, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা, অধ্যাপক ড. সাইদুর আরেফিন ও ডা. অফম সারোয়ার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন