আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এক সেকেন্ডও ইন্টারনেট ছাড়া থাকাও অনেকের জন্য কঠিন। কিন্তু এই ইন্টারনেট আসক্তি কি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে?
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমন একটি বিষয় উঠে এসেছে, যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট সংযোগহীন দুটি সপ্তাহ স্মার্টফোন ব্যবহার করার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোযোগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটতে পারে।
বর্তমানে, আমরা সবাই জানি যে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘ডুমস্ক্রলিং’ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকেই নিজের অজান্তেই করে থাকেন।
তবে, স্মার্টফোন ব্যবহারের এবং ইন্টারনেটের প্রভাব সম্পর্কিত মার্কিন-কানাডা ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণাটি চলছে এবং এই গবেষণার ফলাফল বেশ চমকপ্রদ।
গবেষকদের একটি দল ৪৬৭ অংশগ্রহণকারীর ওপর একটি পরীক্ষা চালায়, যাদের গড় বয়স ছিল ৩২ বছর। পরীক্ষার অংশ হিসেবে, অংশগ্রহণকারীদের স্মার্টফোনের ইন্টারনেট সংযোগ টানা দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই সময় তাদের ফোন কল এবং এসএমএস পাঠানোর অনুমতি থাকলেও, তারা কোনোভাবে অনলাইনে যেতে পারতেন না। পরিবর্তে, তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করে ইন্টারনেট সংযোগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে Proceedings of the National Academy of Sciences (PNAS) জার্নালে এবং এতে দেখা গেছে, এই স্বল্পমেয়াদি বিরতিতে অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোযোগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে।
গবেষণাটিতে ৯১% অংশগ্রহণকারী অন্তত একটি সূচকে উন্নতি জানিয়েছেন এবং ৭৫%-এর বেশি অংশগ্রহণকারী তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি অনুভব করেছেন। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, তাদের মনোযোগের বৃদ্ধি এমন মাত্রায় ছিল যে, এটি ১০ বছরের মনোযোগ কমে যাওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতার বিপরীতে মনোযোগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণার সহলেখক এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের সহযোগী অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান ওয়ার্ড জানান, গত ১৫ বছরে স্মার্টফোন আমাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এনেছে, তবে মানুষের মৌলিক মনস্তত্ত্ব একই রয়েছে। আমরা সবসময় সংযুক্ত থাকার উপযোগী নই।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, ইন্টারনেট ছাড়াই সময় কাটানোর ফলে তাদের সামাজিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং তারা নতুনভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে সক্ষম হয়েছেন। অনেকেই বই পড়া, শখের কাজ করা অথবা মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার মতো কাজ বেশি করেছেন। এসব কর্মকাণ্ড তাদের মানসিক শান্তি এবং সুস্থতার অনুভূতি প্রদান করেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, দুটি সপ্তাহ ইন্টারনেট ছাড়া থাকার ফলে হতাশা কমানোর ক্ষেত্রে এটি অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টের মতো কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর প্রভাব কগনিটিভ বিহেভিয়োরাল থেরাপির (সিভিটি) মতোই হতে পারে। তবে, তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই গবেষণা একটি স্বল্পমেয়াদি পরীক্ষা ছিল, তাই দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব জানার জন্য আরও বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।
এই গবেষণা থেকে যে উপসংহার টানা যায়, তা হলো, আমাদের ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমানো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সংযোগের জন্য উপকারী হতে পারে। দুটি সপ্তাহের বিরতি যদি এত বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার একটি অংশ হতে পারে।
সূত্র : ফ্র্যাঙ্ক ল্যান্ডিমর, নিওস্কোপ
মন্তব্য করুন