ধূমপানের (সিগারেট খাওয়া) ফলে ফুসফুসের ক্ষতির বিষয়টি আমরা প্রায় সবাই জানি, তবে মস্তিষ্কে এর কী প্রভাব পড়ে, তা অনেকেরই অজানা।
সম্প্রতি ‘অ্যানিমেটেড বায়োমেডিকেল’ নামক একটি সংস্থা একটি অ্যানিমেশন ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা গেছে, মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সিগারেটের নিকোটিন মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং এটি একটি ব্যক্তিকে সিগারেটে আসক্ত করে তোলে।
এই ভিডিওটি সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে।
১০ সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্কে নিকোটিনের প্রবাহ
সিগারেটের ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায় এবং এখান থেকে রক্তে মিশে মস্তিষ্কে চলে যায়। সিগারেটের মধ্যে থাকা নিকোটিন একেবারে দ্রুত মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে।
মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে নিকোটিন মস্তিষ্কে পৌঁছে এবং এটি মস্তিষ্কের সেই অংশকে সক্রিয় করে, যা সুখ ও ভালো অনুভূতি সৃষ্টি করে। এই অনুভূতির কারণে ব্যক্তি সিগারেট খাওয়ার পরে স্বস্তি বা সুখ অনুভব করেন।
আসক্তির সৃষ্টি
এই অস্বাভাবিক সুখের অনুভূতির ফলে মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলো এই ‘ভালো লাগা’ অনুভূতিকে আরও চাইতে থাকে। যার ফলে পরবর্তীতে ব্যক্তি আর নিকোটিন ছাড়া থাকতে পারেন না।
এটি আসক্তির সূচনা। মস্তিষ্ক এমনভাবে এই অনুভূতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে, পরবর্তী সময়ে নিকোটিন ছাড়া ভালো লাগার অনুভূতি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
নিকোটিনের প্রভাব ও মস্তিষ্কের আসক্তি
নিকোটিন শরীরে প্রবাহিত হলে তা কিছু সময়ের জন্য ভালো লাগা ও তৃপ্তির অনুভূতি তৈরি করে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিকোটিনের পরিমাণ কমতে থাকে। যখন নিকোটিনের পরিমাণ কমে যায়, তখন শরীরে অস্বস্তি অনুভূত হতে থাকে এবং এ কারণে ব্যক্তি সিগারেট খেতে চান।
এর ফলে সিগারেটের প্রতি অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়, যা আসক্তির লক্ষণ। এই অনুভূতির ওঠা-নামা, ভালো লাগা ও খারাপ লাগার মধ্যে একজন ব্যক্তি সারাদিন ধরে সিগারেট খাওয়ার জন্য অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
সিগারেট ছাড়ার কঠিনতা
একবার সিগারেটের অভ্যাসে আসক্ত হলে এটি ছাড়তে অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। যখন একজন ব্যক্তি সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিষণ্নতা, বিরক্তি এবং নিকোটিনের অভাব অনুভব করেন।
এই পরিস্থিতিতে তিনি আবার সিগারেট খেয়ে ফেলেন, যাতে কিছুটা শান্তি পেতে পারেন। সিগারেটের জন্য মস্তিষ্কে নিকোটিনের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়ে যায় এবং এটি পরবর্তী সময়ে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মস্তিষ্কের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি
সিগারেট খাওয়ার প্রভাব শুধু মস্তিষ্কের ওপরই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পুরো শরীরের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমতে থাকে এবং যাদের দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, তাদের মস্তিষ্কে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কিছু স্মৃতি রাখতে সমস্যা হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের মধ্যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু যারা সিগারেট খায়, তারা তুলনামূলকভাবে অল্প বয়সেই এ সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে।
ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি
সিগারেট খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। নিকোটিন ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক মস্তিষ্কের রক্তনালিতে সমস্যা তৈরি করে এবং এটি ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
তবে ভালো খবর হলো- সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলে পাঁচ বছরের মধ্যে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
সিগারেটে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক ও ক্যানসার
সিগারেটের মধ্যে যে বিষাক্ত রাসায়নিক রয়েছে, সেগুলো মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্যান্য অংশে প্রবেশ করে এবং সেগুলোর মধ্যে কিছু রাসায়নিক ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। মস্তিষ্কে বিষাক্ত পদার্থ প্রবাহিত হলে সেখানেও নানা ধরনের অসুখ হতে পারে।
সিগারেট না খাওয়ার উপকারিতা
সিগারেট খাওয়ার কারণে শরীরের নানা ধরনের সমস্যা যেমন ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ, ব্রেন স্ট্রোক ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। তবে সিগারেট না খেলে এসব রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। সিগারেট খাওয়া শুরু না করার সিদ্ধান্তই সবচেয়ে ভালো, কারণ একবার শুরু করলে তা ছাড়তে অনেক সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই, সিগারেটের প্রতি আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হলে, সিগারেট খাওয়ার শুরু থেকেই বিরত থাকা সবচেয়ে ভালো।
যদি কেউ ইতোমধ্যে সিগারেট খেয়ে থাকেন, তবে তার উচিত দ্রুত সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করা, যাতে শরীর ও মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানো যায় এবং সুস্থ জীবন উপভোগ করা যায়।
সূত্র : হেলথলাইন
মন্তব্য করুন