আপনার দিনটি কেমন কাটছে? জীবনে কোনো আনন্দ আছে কি? না কি প্রতিদিনই মনে হয় সব কিছু নিস্তেজ, বিষণ্ন আর একঘেয়ে? এমনটাই যদি হয়, তাহলে আপনি একা নন। কারণ, গ্যালাপ গ্লোবাল ইমোশন জরিপ ২০২৪-এর তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই দিন কাটাচ্ছেন মনমরা ও আনন্দহীন অবস্থায়।
বাংলাদেশের ৮৩% মানুষ আনন্দহীন জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ বলেছেন, তারা আগের দিন কিছু আনন্দদায়ক কাজ করেছেন বা নতুন কিছু শিখেছেন। বাকি ৮৩ শতাংশের জীবনে কোনো নতুন অভিজ্ঞতা বা আনন্দ ছিল না। একই চিত্র দেখা গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে।
এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সেনেগাল, যেখানে ৭৯ শতাংশ মানুষ আনন্দদায়ক কিছু করার কথা জানিয়েছেন। ভারতের ৫২ শতাংশ এবং চীনের ৫৯ শতাংশ মানুষও তাদের দিনগুলোকে ইতিবাচক ও আনন্দময় বলে উল্লেখ করেছেন।
সুখের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে
বাংলাদেশি মানুষের সুখের অভাবও এই জরিপে স্পষ্ট। গ্যালাপের ইতিবাচক অভিজ্ঞতার সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৫৬, যা বিশ্বের গড় মানের তুলনায় অনেক নিচে। আফগানিস্তান আরও নিচে, যেখানে এই স্কোর মাত্র ৩৮।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা আগের দিন শারীরিক কষ্ট, দুঃখ, উৎকণ্ঠা, ভয় বা রাগ অনুভব করেছেন কি না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
কেন এমন অবস্থা?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনধারায় ক্লান্তি, একঘেয়েমি এবং মানসিক চাপ এই পরিস্থিতির মূল কারণ। কাজের চাপে ব্যক্তিগত জীবন ব্যাহত হওয়া, সামাজিক অস্থিরতা এবং আর্থিক অনিশ্চয়তাও মানুষকে বিষণ্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এছাড়া, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা না থাকাও এই সমস্যাকে আরও গভীর করছে। মানুষ কাজের মধ্যে ডুবে থাকলেও, নিজের শখ বা আনন্দের দিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
বিশ্বব্যাপী প্রফুল্লতার চিত্র উজ্জ্বল, বাংলাদেশে বিপরীত
গ্যালাপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে আনন্দদায়ক কিছু করা বা শেখার হার বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে সেই হার প্রায় স্থবির। এটি শুধু মানসিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও একটি উদ্বেগের বিষয়।
উপায় কী?
বাংলাদেশের মানুষকে মনমরা অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে সামাজিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো, কর্মজীবনে ভারসাম্য আনা এবং আনন্দময় কাজের সুযোগ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র—সব জায়গায় ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পরিবারে সময় কাটানো, শখকে গুরুত্ব দেওয়া এবং নিজের মনের যত্ন নেওয়ায় জোর দিলে জীবনে আনন্দ ফিরে আসতে পারে।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বাংলাদেশের এই চিত্র হতাশাজনক হলেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে এই বিষণ্নতার অন্ধকার থেকে উত্তরণের পথ তৈরি হতে পারে। সুখী এবং আনন্দময় জীবনের জন্য প্রয়োজন মানসিক প্রশান্তি ও ইতিবাচক পরিবেশ।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষও যদি জীবনে আনন্দের ছোট ছোট মুহূর্ত তৈরি করতে পারে, তবে এই ধূসর ছবি রঙিন হতে সময় লাগবে না।
মন্তব্য করুন