মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি হটলাইন চালু করেছে ব্র্যাক। ‘মনের যত্ন’ শীর্ষক এ উদ্যোগের মাধ্যমে উদ্বেগ, আতঙ্ক বা মানসিক চাপে থাকা ব্যক্তিদের, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের জন্য সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে বিনামূল্যে টেলি-কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইইডি) এবং ‘নিরাময়’ নামের একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতায় এটি পরিচালিত হচ্ছে। মানসিক যন্ত্রণার কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য হটলাইনটি তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিচ্ছে, যেখানে সেবা গ্রহীতারা নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে তাদের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা মন খুলে বলতে পারছেন।
এমন একটি সময়ে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে, যখন এ দেশে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দিন দিন বাড়ছে।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের ৭৩.৫ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব, সেবা গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয় এবং নানা রকম সামাজিক চাপের কারণে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এ সেবা নিতে আগ্রহী হন না। ‘দ্য ল্যানসেট সাইকিয়াট্রি’র তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী পেশাদারদেরও অভাব রয়েছে। এখানে প্রতি দশ লাখ মানুষের জন্য একজন মনোবিদও নেই। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এই ঘাটতির কারণে ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবার ওপরই প্রভাব ফেলছে।
‘মনের যত্ন’ হটলাইনটি ছুটির দিনসহ প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ০৯৬৪৩২৬২৬২৬ নম্বরে কল করে অথবা অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে ‘নিরাময় পেশেন্ট অ্যাপ’-এর মাধ্যমে এ সেবা নেওয়া যাচ্ছে। ব্র্যাকের ৭০ জনেরও বেশি প্রশিক্ষিত মনোবিদ এবং সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর সহমর্মিতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে এ সেবা দিচ্ছেন। প্রতিটি সেশন বা আলোচনা সাধারণত ২০ মিনিট স্থায়ী হয়, তবে সেবা গ্রহীতার সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনায় এটি আরও ১০ মিনিট দীর্ঘ হতে পারে। প্রতিটি কলকে একটি সেশন হিসেবে ধরা হয় যা তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক সমস্যা লাঘবে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে ফলোআপের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় ব্র্যাকের ‘মনের যত্ন’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগটি হাতে নেওয়া হয়েছে। হটলাইনের পাশাপাশি এই প্রচারণায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে মানুষের নানা দ্বিধা, সংকোচ, সামাজিক কুসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে তুলতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও তরুণসহ মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন মানুষগুলোর জন্য মাঠপর্যায়ে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগও হাতে নেওয়া হয়েছে।
‘মনের যত্ন’ হটলাইন চালুর মাধ্যমে ব্র্যাক আনুষ্ঠানিক কাউন্সেলিং নিতে অনিচ্ছুক বা দ্বিধাগ্রস্ত মানুষগুলোর জন্য একটি সেতুবন্ধন তৈরি করছে যেন তারা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এখানে কল করে সেবা নিতে পারেন। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা, যারা এমন সেবা নিতে শঙ্কিত বোধ করেন অথবা দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন তাদের জন্য এ হটলাইনটি বিশেষভাবে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন