স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে স্বাস্থ্যবিমা চালু করা খুবই প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে সেন্টার ফর ক্যানসার কেয়ার ফাউন্ডেশন আয়োজিত ক্যানসার চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয় প্রেক্ষিত : বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় বলেন, বিশ্বের উন্নয়নশীল অনেক দেশের চেয়েও স্বাস্থ্য-শিক্ষায় আমরা কম ব্যয় করি। অর্থনীতিতে আমাদের চেয়ে অনগ্রসর অনেক দেশ স্বাস্থ্য-শিক্ষায় আমাদের চেয়ে বেশি ব্যয় করে। কোনো জাতি যদি অগ্রসর হতে চায় তাহলে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে এবং শিক্ষায় সুশিক্ষিত হতে হবে। এ দুই খাতেই আমাদের খরচ কম। আমাদের পাশের দেশে (ভারতে) কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় হেলথ ইন্স্যুরেন্স ভালো প্রভাব ফেলছে। কর্নাটকের মানুষ হেলথ ইন্স্যুরেন্সে সামান্য একটা প্রিমিয়াম দেয়। কর্নাটকের সাধারণ মানুষ ইন্স্যুরেন্সের কারণে সামান্য কিছু টাকায় ভালো চিকিৎসাসেবা পায়। আমাদের দেশেও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে স্বাস্থ্যবিমা চালু করা খুবই প্রয়োজন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকে পুরোপুরি প্রাইভেটাইজেশন করে সুবিধা হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কিন্তু মাথাপিছু চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। একটা বড় জনসংখ্যা ভালো চিকিৎসাসেবা পায় না। তাদের পাশের দেশ কিউবায় তাদের নাগরিকরা ভালো চিকিৎসা সুবিধা পায়। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা। ফলে হেলথের ক্ষেত্রে প্রাইভেটাইজেশন ভালো কিছু হতে পারে না। কেউ চিকিৎসা করাতে শখে যায় না। প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা করাতেই যায়। দেশের জনগণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হলে অর্থনীতিও ভালো থাকবে না।
উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসা খরচ অনেক কম খরচ করি চিকিৎসা-শিক্ষায়। সমাজে কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে উত্থাপিত হলে তবেই সরকার সেখানে বরাদ্দ বাড়াবে। সরকার সেই বিষয়কেই গুরুত্বপূর্ণ পলিসি হিসেবে নিবে যেই বিষয়টা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে উত্থাপিত হবে। সরকার মনে করবে, আমি যদি এই দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি তাহলে জনগণের ওপর আমার আস্থা বাড়বে। ফলে স্বাস্থ্য-শিক্ষায় যদি বাড়াতে হয় তাহলে আমি মানুষকে সচেতন করা ও গণদাবিতে বিষয়টা রূপান্তরের বিকল্প আমি দেখি না।
গণদাবি না উঠলে স্বাস্থ্য-শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কোনো সরকারের আমলেই বাড়বে না। সেসঙ্গে স্বাস্থ্য বিমা চালু করতে হবে। জাতির জন্য দুর্ভাগ্য আমরা ভালো কাজের ধারা রক্ষা করি না। যে কাজটা পজিটিভ জনগণের জন্য সেই কাজটা ধারাবাহিক হবে না কেন? আমরা তো খারাপ কাজটা বাদ দিব। ক্ষমতার পাল বদলে ভালো কাজগুলো বন্ধ না হয়। ভালো উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সেটা জনগণের জন্যই খারাপ হবে।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, রোগীর স্বার্থে সবাই এক সঙ্গে সমন্বয় করে যদি চিকিৎসা দিতে পারি তাহলে ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যয় ও সময় কম লাগবে। এছাড়াও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে রোগী ও তার স্বজনদের জানার অধিকার আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নামে একটা প্রকল্প নেই। ২০০৯ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু পটপরিবর্তেন পর সেই কর্মসূচি আর আলোরমুখ দেখেনি। ক্যান্সার বাড়ছে কিন্তু এই রোগ নিয়ে সরকারের কোনো কর্মসূচি, পরিকল্পনা কিংবা জাতীয় উদ্যোগ নেই। এটা বড়ই দুর্ভাগ্য।
সেন্টার ফর ক্যানসার কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি রোকশানা আফরোজের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইদুজ্জামান চৌধুরী অপু, প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. হালিদা হানুম আখতার, অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মেজবাউল খান ফরহাদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন