মানসিক স্বাস্থ্য খাতে এক ডলারের বিনিময়ে চার ডলারের সমপরিমাণ রিটার্ন আসতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তাতে চারগুণ পর্যন্ত রিটার্ন আসতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সাথে যৌথভাবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি- বিসিপিএস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রশাসন অধ্যাপক ডক্টর মামুন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারি ডিএনএ ল্যাবের মহাপরিচালক ডা. এ এম পারভেজ রহীম, স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. এবিএম আবু হানিফ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ডক্টর মো. আখতার হোসেইন খান।
ওয়েবিনারে কি-নোট স্পিকার ছিলেন বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ডক্টর মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি জানান, মানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগে কোন লস নেই। বরং সুস্বাস্থ্য আর ভালো উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে তা ফিরে আসে। যা দেশের গোটা অর্থনীতির চেহারা বদলে দিতে সাহায্য করবে।
আইইউবিএটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, কর্মস্থলে এমন নীতিমালা থাকতে হবে, যাতে কর্মীরা বৈষম্যের শিকার না হন। যাতে কর্তৃত্বের ভারসাম্য থাকে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. জহির উদ্দিন বলেন, হেলথ সিস্টেমে সাইকোলজিস্ট ও অকুপেশনাল থেরাপিস্টদের মতো নন-মেডিক্যাল পারসনরা জায়গা করতে পারছেন না। এটা একটা বড় বৈষম্য।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. শাহনূর হোসেইন। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে সাইকোলজি কমিউনিটিতে প্রথমবারের মতো বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন শুরু করেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা। ডিসেম্বর পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কমিউনিটিতে তুলে ধরা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে ২৮ অক্টোবর ফ্রি কাউন্সেলিং ও অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম করবে ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট। এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালাও পরিচালিত হবে।
ড. শাহনূর জানান, এ দেশে ১৫ হাজারের মতো মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী প্রয়োজন।
ওয়েবিনারে ঢাবির নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক কামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, এদেশে ৪শ জনের মতো সাইকিয়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টসহ ৫শ জনের মতো সাইকোলজিস্ট আছেন। সব মিলিয়ে দুই হাজারের মতো মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী আছেন। তবে ৫ হাজারের মতো জনবল তৈরি করে কমিউনিটিতে নিয়োগ দিতে পারলে তা অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য একটা মডেল তৈরি হতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে কমান্ডিং ভয়েজটা চেঞ্জ করে সহকর্মীর সমস্যা বোঝা দরকার বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. এবিএম আবু হানিফ। তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের পোস্টগুলো কেন শূন্য হয়ে আছে, সেটা আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। পোস্টগুলো ডিস্ট্রিক লেভেল পর্যন্ত থাকা দরকার। পলিসি মেকারদের ইনক্লুড করে বাজেটের বিষয়টাও খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন তিনি।
ওয়েবিনারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিশু নিহতের ঘটনা স্মরণ করেন সরকারি ডিএনএ ল্যাবের মহাপরিচালক ডা. এ এম পারভেজ রহিম। পরিবারে মেন্টাল ট্রমা কতটা কষ্টের তা উল্লেখ করে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হয় তাহলে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতি বছর আত্মহত্যায় অনেক বড় অংশের মানুষ মারা যায়।
ডা. এ এম পারভেজ রহিম জানান, উপজেলা লেভেলে মেন্টাল হেলথ সেবা এখনও জিরো পর্যায়ে আছে। ১৮ কোটি মানুষকে সেবা দিতে ৫ হাজার প্রশিক্ষিত পেশাজীবী দরকার। হাসপাতালে সাইকোলজিস্টদের রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। তড়িৎ গতিতে এই প্রসেস করতে হবে। তা না হলে মেডিক্যাল এবং নন-মেডিক্যাল প্রফেশনালদের মাঝে বৈষম্য রয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
ওয়েবিনারে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন। যা দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য "কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার এখনই সময়"। একজন কর্মী কীভাবে ভাবছেন, কী আচরণ করছেন, তার সবটুকুই প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে প্রভাব ফেলে। কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বারোপ করা তাই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। উন্নত বিশ্বের শ্রম ব্যবস্থাপনায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন