হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত যারা তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই জানেন না, তারা শরীরে এ ভাইরাসটি বহন করছেন। এতে আক্রান্তদের রোগের মাত্রা বেড়ে অন্যদের মাঝে ছড়াচ্ছে। আবার যারা রোগটি সম্পর্কে অবগত তারা কুসংস্কার ও বঞ্চনার কারণে রোগটি গোপন করছে। অন্যদিকে ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে না।
রোববার (২৮ জুলাই) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফোরাম ফর দ্য স্ট্যাডি অব দ্য লিভার বাংলাদেশ, ইন্টারভেনশাল হেপাটোলজি ডিভিশনের আয়োজনে এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানের সায়েন্টিফিক পার্টনার হিসেবে ছিল বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি।
জানা গেছে, দেশের এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮৫ লাখ হেপাটাইটিস বি ও ১৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই সংখ্যা আগের ১০ বছরের তুলনায় কম। তবে জাতীয় পর্যায়ে ২০১৮ সালের পর কোনো জরিপ না হওয়ার এর কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল তার প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, রক্তের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি এখন আর কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেওয়ার আগে এটি ধরা গেলে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির নিরাময়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। পৃথিবীতে এই ভাইরাসটির জন্য বেশ কয়েকটি ওষুধ রয়েছে যার সবগুলোই বাংলাদেশেও সহজলভ্য। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের হতাশ না হয়ে লিভার রোগ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ফরিদা ইয়াসমিন এমপি বলেন, কিছু কিছু দিবসকে সচেতন করতে হয় সবার সচেতনতার জন্য। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস একারণেই আমরা স্মরণ করি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেতনতায় জাতীয় প্রেস ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে আছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের থেকে বাঁচতে সব সময় নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের জন্য আগস্ট মাসে হেপাটাইটিস ভাইরাস পরীক্ষার জন্য একটি মেডিকেল ক্যাম্প করব।
ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর বলেন, হেপাটাইটিস বি রোগটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না। এটি হচ্ছে নীরব ঘাতক। তবে আক্রান্তের হার কমিয়ে আনতে হবে। এখনো মানুষের মাঝে সচেতনতা আসেনি। এই রোগের বিষয়ে দেশের জনগণকে সচেতন করতে বড় ধরনের কার্যক্রম গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। শুধু চিকিৎসকদের পক্ষে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব না।
ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, পানি পড়া, ঝাড়ফুঁকের মতো অপচিকিৎসার কারণে হেপাটাইটিস বি রোধে আক্রান্ত রোগীরা বেশি মারা যায়। সঠিক চিকিৎসায় রোগীরা আরোগ্য লাভ করে।
এস এম মাহমুদুল হক পল্লব বলেন, হেপাটাইটিস সি এর কার্যকরী চিকিৎসা সেবা থাকলেও হেপাটাইটিস বি সম্পূর্ণ নির্মূল করার মতো এখনো কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই সচেতনতাই হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। চলতি বছরের শেষ দিকে হেপাটাইটিস বি রোগ প্রতিরোধে বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল আরও একটি ওষুধ বাজারে নিয়ে আসবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি’র সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। আলোচনায় অংশ নেন বিশেষ অতিথি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, বিএসএমএমইউ হেপাটোলজি এ্যলুমনাই এসোসিয়েশনের ডা. মো. আব্দুর রহিম এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মাহমুদুল হক বিপ্লব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মো. আশরাফ আলী।
মন্তব্য করুন