কার্ডিয়াক স্টেন্টিং বা পেসমেকার থাকা অবস্থায় ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা যাবে কিনা, তা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং খেলার ধরন ও তীব্রতার ওপর। স্টেন্টিংয়ের পরপরই উচ্চমাত্রার শারীরিক কার্যকলাপ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তবে ফিটনেস ফিরে এলে সীমিত মাত্রায় হালকা খেলার অনুমতি দেওয়া হয়।
স্টেন্ট বসানোর পর সাধারণত প্রথম কয়েক সপ্তাহ ভারী পরিশ্রম নিষেধ, কারণ হার্ট তখনো সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় থাকে। আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি (ACC) অনুযায়ী, যদি হার্টের অবস্থা স্থিতিশীল থাকে এবং চিকিৎসক অনুমতি দেন, তবে হালকা শারীরিক কার্যকলাপ (যেমন হাঁটা, হালকা ব্যায়াম) করা যায়।
তবে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতে হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের বিশেষ পরামর্শ, অনুমতি প্রয়োজন, কারণ এসব খেলায় হঠাৎ দৌড়ানো ও শারীরিক ধাক্কা লাগার ঝুঁকি থাকে, প্রচণ্ড স্ট্রেস থাকে, যা হৃদযন্ত্রের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে খেলোয়াড়ের জীবন বিপন্ন করতে পারে।
পেসমেকার থাকা অবস্থায় উচ্চমাত্রার শারীরিক কসরত, খেলাধুলা অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ অতিরিক্ত পরিশ্রম, ধাক্কা বা আঘাতে ডিভাইসের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনের মতে, ফুটবলের মতো খেলায় পেসমেকারের ওপর সরাসরি ধাক্কা লাগতে পারে, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
ক্রিকেট তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও, ফিল্ডিং করার সময় হঠাৎ আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকের অনুমতি থাকলে হালকা মাত্রার খেলা বা ফিটনেস ট্রেনিং করা যেতে পারে।
কার্ডিয়াক স্টেন্ট বা পেসমেকার নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে খেলাধুলার ধরন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সীমিত মাত্রায় খেলাধুলা করা যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধাপে ধাপে ফিটনেস অর্জন করা এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মাঠে নামা।
হৃদযন্ত্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে (Cardiac Arrest) CPR বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা দ্রুত প্রয়োগ করা গেলে জীবন রক্ষা সম্ভব। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষেই এটি প্রফেসরদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শেখেন এবং অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে ওঠেন।
অসচেতনতা বা না জানার জন্য অনেক সময় রোগীর স্বজনরা এ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেন। তারা বলেন, "ডাক্তার তার রোগীর বুকে চেপে ধরে নিশ্বাস বন্ধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।"
ভুল ধারণা দূর করতে সাধারণ মানুষেরও এই জীবনরক্ষাকারী কৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
হার্ট অ্যাটাকের কারণে (হার্টের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় এবং হার্টের কিছু অংশে রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না) যদি কারও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় (হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমের গোলযোগে হৃদস্পন্দন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া), তবে দ্রুত কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (CPR- Cardiopulmonary Resuscitation) শুরু করা জীবন রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। American Heart Association (AHA) নির্দেশনা অনুযায়ী, হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়ার ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সাড়া না দিলে সঙ্গে সঙ্গে CPR শুরু করা উচিত (AHA, 2020)।
গবেষণা মতে, ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে CPR শুরু করলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে, এবং ২ মিনিটের মধ্যে শুরু করলেও সুফল পাওয়া যায় (Perkins et al., 2015; Panchal et al., 2019)।
সঠিক সময়ে CPR শুরু না করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবজনিত ক্ষতি শুরু হয়। ৪-৬ মিনিটের মধ্যে CPR না করলে স্থায়ীভাবে ব্রেন ড্যামেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়, এবং ১০ মিনিট পর শুরু করলে সাধারণত রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে (Sandroni et al., 2007; Meaney et al., 2013)।
CPR-এর পাশাপাশি Automated External Defibrillator (AED) ব্যবহার করা গেলে রোগীর বেঁচে থাকার হার আরও বেড়ে যায়। গবেষণা অনুযায়ী, CPR এবং AED একসঙ্গে প্রয়োগ করা হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫০-৭০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে (Holmberg et al., 2000; Gräsner et al., 2021)।
তাই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব CPR শুরু করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ প্রতি মিনিট দেরি হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় ১০% কমে যায় (Nichol et al., 2008)।
মানুষের মৃত্যু নির্ধারিত। সময় আসলে আমাদের চলে যেতে হবে। চিকিৎসক হয়তো তার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন মাত্র। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আমরা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবন দিয়ে থাকি, অতঃপর আমাদের কাছে তাদের ফিরে আসতে হয়।" (সূরা আল-আনআম, ৬:৬০)
লেখক : ডা. সাঈদ এনাম, সহযোগী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রি, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
মন্তব্য করুন