ছয় ঋতুর বাংলাদেশ। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পরেই আসে বর্ষা। দিন, সপ্তাহ, মাসজুড়ে নামে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। একটানা বর্ষণের ফলে খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা-পুকুর বর্ষার পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে। বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানিতে সৃষ্টি হয় এডিস মশা। মশার কামড়ে মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়ে নানান সংক্রমণ। এই সময়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ। এসব রোগে অসুস্থ হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। যেখানে সেখানে পানি জমে থাকতে দেখলে তা ফেলে দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বর্তমানে টাইফয়েডের ঝুঁকিও কম নয়। টাইফয়েড একধরনের জ্বর যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। তবে মশার কামড়ের সঙ্গে টাইফয়েডের সরাসরি সম্পর্ক নেই। মশা শরীরে করে ব্যাকটেরিয়া বহন করে অন্যত্র ছড়িয়ে দেয়। দুই ধরনের জীবাণু সংক্রমণের মাধ্যমে টাইফয়েড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মূলত মানুষের শরীরে টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে টাইফয়েড জ্বর হয়। আর সালমোনেলা প্যারাটাইফি ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে প্যারা টাইফয়েড জ্বর হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানবদেহে দূষিত খাবার এবং দূষিত পানির মাধ্যমে টাইফয়েডের জীবাণু প্রবেশ করে। কোন খাবারে বা পানিতে যদি টাইফি ব্যাকটেরিয়া ও সালমোনেলা প্যারাটাইফি ব্যাকটেরিয়া থাকে সে খাবার বা পানি খেলে-পান করলে তার সঙ্গে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করে টাইফয়েড সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তির মল-মূত্রের মাধ্যমেও টাইফয়েডের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তি যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ করলে বা মল ত্যাগের পর জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার না করলে তার সংস্পর্শে টাইফয়েড সংক্রমিত হতে পারে। যেখানে সেখানে মল ত্যাগের মাধ্যমে ভয়াবহ রুপে টাইফয়েড ছড়িয়ে পড়তে পারে।
টাইফয়েডের লক্ষণসমূহ: দুই ধরনের টাইফয়েডের একই লক্ষণ। হালকা থেকে উচ্চ জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, মাথাব্যথা, পেশি ও পেটে ব্যথা, দুর্বলতা এবং ক্লান্তিসহ ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। টাইফয়েড জ্বর থেকে শারীরিক আরও কিছু জটিলতাও হতে পারে। যেমন- মস্তিস্কে প্রদাহ, নিউমোনিয়া, হেপাটাইটিস, লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। টাইফয়েড জ্বর শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে।
টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায়: * বেশি বেশি নিরাপদ পানি পান করতে হবে। * খাবার গ্রহণের পূর্বে সাবান বা জীবণুনাশক দিয়ে হাত ধুতে হবে। * মলত্যাগের পরে সাবান বা জীবণুনাশক দিয়ে হাত ধুতে হবে। * দূষিত স্থান থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। * কাঁচা ফল ও সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। * নিরাপদ স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে। * টাইফয়েডের টিকা গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন