কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৫:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিএসএমএমইউতে চোখের নীরব ঘাতক বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ শুরু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

র‌্যালি, সেমিনার, লিফলেট বিতরণসহ জনসচেতনতামূলক নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চোখের নীরব ঘাতক বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ ২০২৫ (৯-১৫ মার্চ) শুরু হয়েছে।

দেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ১১ মার্চ (মঙ্গলবার) বিএসএমএমইউর সি ব্লকের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে র‌্যালির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। এবারে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহের স্লোগান হলো- ‘এক সাথে হাত ধরি, গ্লুকোমা মুক্ত বিশ্ব গড়ি’।

র‌্যালিপূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, গ্লুকোমা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শুরুতেই এ রোগ চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সচেতনতার মাধ্যমে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিএসএমএমইউতে গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসার জন্য গ্লুকোমা ক্লিনিক রয়েছে।

এখানে চোখের রোগগুলোর সর্বাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে চক্ষু বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাসেবা ও গবেষণার ব্যবস্থা। এখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতনামা ফ্যাকাল্টিরা রয়েছেন। তাই বিএসএমএমইউকে এখন চোখের নীরব ঘাতক গ্লুকোমা চিকিৎসায় রোল মডেল হতে হবে। চোখের চিকিৎসায় এভিডেন্স বেইসড মেডিসিনকে গুরুত্ব দিতে হবে, গাইডলাইন ফলো করে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে।

বিএসএমএমইউর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এসব আয়োজনে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জাফর খালেদ, বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী, ডা. শাহ নূর হাসান, ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান, ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান, ডা. মো. গোলাম ফারুক, সহকারী অধ্যাপক ডা. নিরুপম চৌধুরী, ডা. মেহজাবিন হক, ডা. রাজশ্রী দাশ, ডা. জাহিদা জব্বার, ডা. সোনিয়া আহসান, ডা. তাজমেহ মেহতাজ, ডা. মাজহারুল ইসলাম প্রমুখসহ চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এসব আয়োজনে জানানো হয়- গ্লুকোমা চোখের এমন একটি রোগ, যাতে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে, চোখের পেছনের স্নায়ু অকার্যকর হয়ে ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি চলে যায়। গ্লুকোমা হলো বাংলাদেশ তথা পৃথিবীতে অনিবারণযোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ।

বিএসএমএমইউতে রয়েছে ভিজুয়াল ফিল্ড অ্যানালাইসিস, কালার ফান্ডাস ফটে, ওসিটি গ্লুকোমা লেজার, ট্রাবেকুলেকটমি অপারেশন, কম্বাইন্ড অপারেশন (ছানি এবং গ্লুকোমা), বাচ্চাদের গ্লুকোমা অপারেশন, গ্লুকোমা টিউব ইমপ্ল্যান্ট, কোলাজেন ইমপ্ল্যান্ট ইত্যাদি। যে কোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে। জন্মের সময় বেশ বড় চোখ এবং চোখের চাপ নিয়ে জন্মালে, একে কনজেনিটাল গ্লুকোমা বলে। তরুণ বয়সেও হতে পারে, একে বলে জুভেনাইল গ্লুকোমা। বেশির ভাগ গ্লুকোমা রোগ ৪০ বছরের পরে হয়। এদের প্রাথমিক গ্লুকোমা বলে।

এছাড়াও পারিবারিকভাবে যাদের এ রোগ আছে, যারা মাইনাস পাওয়ার চশমা পরেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেশি বয়সজনিত চোখের গঠনে পরিবর্তন, জন্মগত গঠনের ত্রুটি, আঘাত, চোখ লাল হওয়া, ডায়াবেটিসজনিত চোখের রক্তহীনতা, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরই বা হরমোন থেরাপি, ছানি পেকে যাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্লুকোমা হতে পারে।

বক্তারা জানান, প্রাইমারি গ্লুকোমা সাধারণত ২ চোখে হয় এবং যে কোনো বয়সে হতে পারে। এর কারণ হলো চোখের গঠনগত পরিবর্তন। আর একটি হলো সেকেন্ডারি গ্লুকোমা- এটা সাধারণত এক চোখে হয়। আঘাতজনিত কারণে এবং ঘন ঘন চোখ লাল বা প্রদাহ জনিত কারণে এ রোগ হতে পারে। এ রোগের উপসর্গের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসতে পারে।

হঠাৎ করে এক চোখে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, তার সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। আবার সব সময় হালকা চোখে এবং মাথাব্যথা (বিশেষ করে কম আলোতে) এবং আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে ব্যথাবিহীন উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এবং চশমার পাওয়ার পরিবর্তন নিয়েও রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসে।

মাঝে মাঝে দৃষ্টি সীমানার যে কোনো এক পাশে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, ছানি পেকে চোখে লাল হওয়া ইত্যাদিও এ রোগের উপসর্গ হতে পারে। জন্মগত বড় চোখ, চোখ হতে পানি পড়া এবং আলোতে চোখ বন্ধ করে ফেলা জন্মগত গ্লুকোমা লক্ষণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, রোগীর ইতিহাস এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় সম্ভব। এর মধ্যে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা (ভিজুয়াল একুইটি), চোখের চাপ পরীক্ষা (ইন্ট্রাঅকুলার প্রেসার), গনিয়াস কপী বা চোখের কোণা পরীক্ষা এবং অফথালমোসকপী বা চোখের স্নায়ু পরীক্ষা বেশি গুরুত্ব বহন করে। স্বাভাবিক চোখের চাপ সাধারণ (১০-২১) মি.মি. মার্কারি। অস্বাভাবিক চোখের চাপ থাকলে সব পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোমা শনাক্ত করে ত্বরিত চিকিৎসা বাঞ্চনীয়।

এ রোগ প্রতিরোধে করণীয় হলো- পারিবারিকভাবে যাদের গ্লুকোমা রোগের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চোখ পরীক্ষা করতে হবে, অল্প আলোতে কারও চোখে এবং মাথাব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন, চোখে ছানি পড়লে তা পেকে যাওয়ার আগে অপারেশন করিয়ে নেওয়া ভালো, চোখে প্রদাহ হলে সেটা থেকে গ্লুকোমা হওয়ার আগে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন, চোখে আঘাতের পর দেরি না করে চিকিৎসা করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অতিরিক্ত দর্শনার্থী ঠেকাতে শের-ই-বাংলা মেডিকেলে চালু হচ্ছে কার্ড

পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে আ.লীগ নেতার লাফ, অতঃপর...

আরব সাগরে যুদ্ধজাহাজ নিয়ে হাজির রাশিয়া-ইরান, আসছে চীন

ঢাকায় আজও বইছে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস

চোরাকারবারিদের ধরতে গিয়ে বিজিবি সদস্য নিহত

ধর্ষণের শিকার শিশুর ৯৭% ছবি-ভিডিও সরানো হয়েছে : বিটিআরসি

খাল অবৈধ বাঁধমুক্ত করল স্থানীয়রা

ইসরায়েলের প্রতি বিতৃষ্ণা, ফিলিস্তিন প্রেম বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে

পুরুষের মাথায় বাড়ি দিয়ে হোলি উদযাপন

শাহবাগ নিয়ে হাসনাতের স্ট্যাটাস

১০

দিন-দুপুরে সোনার বিপণিবিতানে ডাকাতি, ভিডিও ভাইরাল

১১

১২ মার্চ : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

১২

১২ মার্চ : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৩

‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে হাজারো সংস্কারে লাভ নেই’ 

১৪

মধ্যরাতে বরিশাল মহাসড়কে ঝরল দুই প্রাণ

১৫

মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

১৬

২৪ ঘণ্টার মধ্যে লাকিকে গ্রেপ্তারের দাবি জবি শিক্ষার্থীদের

১৭

টাইব্রেকারে লিভারপুলকে কাঁদিয়ে কোয়ার্টারে পিএসজি

১৮

গভীর রাতে ঝোপে মিলল যুবকের মরদেহ

১৯

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে নিল ইউক্রেন

২০
X