প্রিমিয়ার লিগের মোহামেডান-শাইনপুকুর ম্যাচের টস শেষে অসুস্থ বোধ করেন তামিম। প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও পরে বিষয়টি গুরুতর হতে শুরু করে। তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। দ্রুততম পদক্ষেপে তার হার্টে রিং পরানো হয়। এ সময় চলতে থাকে কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর)। গুরুতর অবস্থায় এ পদ্ধতি রোগীর হৃদস্পন্দন ফেরাতে সহযোগিতা করে।
তামিমের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে সিপিআর। তার এ যাত্রায় সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের দাবিদার মোহামেডানের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরীর। তিনি অ্যাম্বুলেন্সে তামিমকে সিপিআর করতে থাকেন।
জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার সময় বুকে পাঞ্চ করছিলেন ইয়াকুব চৌধুরী। জরুরি মুহূর্তে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এটি সবচেয়ে জরুরি কাজগুলোর অন্যতম। হঠাৎ করে কেউ কোনো সাড়া না দিলে দ্রুততম সময়ে কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) শুরু করতে হয়।
সিপিআরের অন্যতম কাজ হলো রোগীর বুকে পাঞ্চ করা। হৃৎপিণ্ড নিঃসাড় হয়ে গেলে সিপিআরের সিপিআরের মাধ্যমে আবার স্পন্দন ফেরানোর প্রচেষ্টা করা হয়। সফল সিপিআরে অনেক রোগীর প্রাণ বাঁচে।
তামিমের এ অসুস্থতা আমাদের শিখিয়েছে যে জীবন বাঁচাতে সবারই সিপিআর শিখে রাখা উচিত। এটি শেখার সঙ্গে মেডিকেল পেশার সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন নেই। যে কেউ এ বিষয়টি শিখতে পারেন। এতে করে বাঁচতে পারে আপনজনসহ চেনা-অচেনা বহু মানুষের প্রাণ।
হার্ট অ্যাটাকের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসক দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। উন্নত কোনো জায়গায় নেওয়ার চেয়ে নিকটস্থ এনজিওগ্রাম ও স্টেন্টিংয়ের সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালে নেওয়া উচিত। এতে একদিকে মূল্যবান সময় বাঁচবে, অন্যদিকে বেঁচে যাবে অমূল্য প্রাণ।
এর আগে চিকিৎসকরা জানান, মাত্র কয়েক মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্তই কেড়ে নিতে পারত তামিমের জীবন। হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এজন্য হেলিকপ্টার প্রস্তুতও ছিল। তবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তুললে হয়তো তামিমকে আর ফিরে পাওয়া যেত না।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম ইকবাল। প্রথমে গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা ভেবে ওষুধ নেওয়া হলেও কিছুক্ষণ পর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। তাকে দ্রুত সাভারের কেপিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে কিছুটা সুস্থ অনুভব করায় তিনি নিজেই ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে বলেন।
তবে ঠিক তখনই ভয়ংকর এক সংকট তৈরি হয়। বিকেএসপির অভিজ্ঞ কোচ মন্টু দত্ত গণমাধ্যমকে জানান, যখন হেলিকপ্টার নামানো হলো, তখন তামিম বুঝতে পেরে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন এবং বিকেএসপির দিকে ফিরে যেতে চান। কিন্তু পথে তার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। চিকিৎসকরা তখন জানান, তাকে আকাশপথে নিলে হয়তো আর বাঁচানো সম্ভব হবে না।
শেষ মুহূর্তের সেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই হয়তো আজ তাকে জীবন দিয়েছে। দ্রুত কেপিজি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে এনজিওগ্রাম করে হার্টে ব্লক শনাক্ত করেন এবং সফলভাবে রিং পরানো হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. রাজিব জানান, ‘স্টেন্টিং খুবই কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’
মন্তব্য করুন