আমাদের অনেকেরই এলার্জির সমস্যা রয়েছে। ছোট থেকে শুরু করে বয়স্ক—সবাই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ছোটবেলায় অ্যালার্জির সমস্যা নেই, কিন্তু বড় হয়ে এ সমস্যা শুরু হয়েছে। আবার যাদের ছোটবেলায় এলার্জি ছিল, তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা কমে গেছে।
এলার্জির সমস্যার কারণে অনেকেই সুস্বাদু খাবার খেতে পারেন না। এতে অনেক সময় পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হয়। অনেকেই এলার্জির সমস্যাকে তেমন গুরুত্ব দিই না। ফলে ধীরে ধীরে এ সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। আর তখনই শুরু হয় যন্ত্রণা। তাই অ্যালার্জি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখা জরুরি।
আমাদের শরীর রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ করে। আর যখন এ ব্যবস্থার কোনো ত্রুটি হয়, সেটিকেই মূলত এলার্জি বলা হয়। যাদের এলার্জির সমস্যা আছে, তাদের শরীর রোগ-জীবাণুকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি যেসব উপাদান শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, তার বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এই অস্বাভাবিক প্রক্রিয়াকেই এলার্জি বলা হয়।
আমাদের শরীরে এলার্জি হওয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু খাবার, ধুলাবালি, গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া, ঘাম, গৃহপালিত পশু-পাখি, পরাগ রেণু ও ফুলের রেণু, সূর্যরশ্মি, ডাস্ট মাইট, মোল্ড বা ছত্রাক, বিভিন্ন ওষুধ, কীটনাশক, ডিটার্জেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ল্যাটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি গ্লাভস ও কনডম ও স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। এ ছাড়া কিছু খাবারে এলার্জি হতে পারে। সেগুলো হলো চিংড়ি, বেগুন, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস ও বাদাম।
শরীরে এলার্জির উপস্থিতি থাকলে সেটি কয়েকটি লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেগুলো হলো— - চামড়ায় চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠা। - শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়া। - চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া। - চোখের চুলকানি থেকে পানি পড়া ও লাল হওয়া। - হাঁচি, কাশি, নাকে ও গলায় চুলকানি এবং নাক বন্ধ হওয়া। - শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া। - বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, পেটব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া।
কয়েকটি ঘরোয়া উপায়ে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় দূর করা যায়। সেগুলো হলো—
এলার্জি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দুর্দান্ত উপাদান টি-ট্রি অয়েল। এটি ত্বকের অ্যালার্জিতে খুব সহায়ক। এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিআইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য, যা অনেক ত্বককে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি দেয়। তাই ত্বকের লালচে ভাব এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে এটি ভালো কাজ করে।
ওজন হ্রাস ও হজমজনিত সমস্যা দূর করতেই যে শুধু অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়, বিষয়টা একদমই তেমন নয়। এটি ত্বকের ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। এতে রয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, যা ত্বকে চুলকানি এবং অ্যালার্জির প্রভাব কমিয়ে দেয়। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটি ব্যবহার না করাই ভালো।
এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এবার তুলা দিয়ে চুলকানির স্থানে মিশ্রণটি লাগান। দিনে অন্তত দুবার মিশ্রণটি লাগালে ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
স্কিন কেয়ারের জন্য নারকেল তেল সবচেয়ে সেরা। এতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং, যা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। এ ছাড়া নারকেল তেল চুলকানি কমায়।
একটি বাটিতে সামান্য নারকেল তেল নিয়ে পাঁচ সেকেন্ডের জন্য গরম করুন। তার পরে যেখানে অ্যালার্জির লক্ষণ আছে, সেখানে গরম তেল প্রয়োগ করুন। এটি এক ঘণ্টা রেখে দিন। এভাবে ৩-৪ ঘণ্টা পরপর নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের অ্যালার্জি দূর করবে।
ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় হলো অ্যালোভেরা জেল। অ্যালার্জির কারণে যদি ত্বকের চুলকানি এবং শুকনো সমস্যা হয়, তাহলে অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ দ্রুত জ্বালা এবং চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়।
একটা তাজা অ্যালোভেরা কেটে সেটি ত্বকে লাগাতে পারেন। আর যদি অ্যালোভেরা না থাকে, তাহলে আপনি অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন। ৩০-৪০ মিনিট ত্বকে রেখে দিন। দেখবেন, চুলকানির সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
ত্বকের অ্যালার্জি দূর করতে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এটি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, এটি ত্বকে পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
প্রথমে সামান্য পানিতে এক চামচ সোডা যোগ করুন। এরপর একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন এবং অ্যালার্জির স্থানে লাগান। ১০ মিনিটের পর ধুয়ে ফেলুন। দিনে ৩-৪ বার ব্যবহার করলে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
সূত্র : এই সময়
মন্তব্য করুন