দেশের সব সরকারি হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের ল্যাব ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্টের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মহাখালী নিপসম অডিটোরিয়ামে বিশ্ব ল্যাবরেটরি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় তিনি বলেন, দেশের জেলা উপজেলা সব বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ২৪ ঘন্টা ল্যাব খোলা রাখা উচিত। তিনটি রোটেশন রাখা উচিৎ। যাতে পাঁচ মিনিটের মাঝে রেজাল্ট পাওয়া যায়। ইউনিয়ন পর্যায়েও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। সঠিক রোগ নির্ণয় মানুষের জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে। তাই দক্ষতার সাথে এবং সারাদেশে রোগীর পরীক্ষা সহজলভ্য করা উচিত।
জয়নাল আবেদিন টিটো বলেন, সরকার যদি এসকল প্রতিষ্ঠানের আয়কে অর্থ মন্ত্রণালয়ে না পাঠিয়ে নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে আয় ব্যয় করার সুযোগ দেয় তাহলে প্রতিষ্ঠান গুলো সেই আয় থেকে নিজেদের বেতন দিয়ে উলটো রাজস্ব আসতে পারে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় দুইটি করে ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, সারাবিশ্ব জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গেছে। সে তুলনায় আমাদের দেশ বেশি আগাতে পারেনি। প্রতিনিয়ত পৃথিবী আপগ্রেড হচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে আগানোর জন্য যে নিয়মিত সরকারি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তা আমাদের দেশে হয় বলে জানা নেই। তা চিকিৎসক, নার্স কিংবা টেকনোলজিস্ট কারো জন্য নেই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগ নির্ণয়ের সেবায় চরম জনবল সংকট থাকলেও প্রায় ৪০ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট এখনো বেকার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই বৈপরীত্য শুধু স্বাস্থ্যসেবার মান কমাচ্ছে না, চিকিৎসার খরচও বাড়াচ্ছে।
সভায় জানানো হয়, উপজেলাসহ দেশের সব হাসপাতাল ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে ২৪ ঘণ্টা রোগ নির্ণয় সেবা চালু করা গেলে এই সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। একই সঙ্গে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি, ঝুঁকি ভাতা এবং রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি ওঠে। অনেক ল্যাবেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলো ব্যবহার করা যায় না। ফলে রিজেন্টস নষ্ট হয়, মেশিন অলস পড়ে থাকে।
অথচ রোগের শুরুতেই যদি নির্ভুল পরীক্ষা হয়, তাহলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। কোভিড-১৯ মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, সেই টেকনোলজিস্টরা এখনো ন্যায্য মর্যাদা পাননি। অথচ চিকিৎসকের পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে ৫ জন টেকনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে সে অনুপাতে নিয়োগ নেই। বক্তারা বলেন, দশম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ পুরোনো দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
আমেরিকান রেজিস্টার্ড সাইন্টিস্ট মো. সোহেল রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নিপসম পরিচালক ডা. জিয়াউল ইসলাম, আইএইচটি ঢাকা’র অধ্যক্ষ ডা. মুজিব উদ্দিন, সাইক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবু মু ইয়াহইয়া হোসেন, জাতীয় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ এবং সেক্রেটারি রিপন সিকদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউকে শিক্ষার্থী ও আমেরিকান রেজিস্টার্ড সাইন্টিস্ট আবু বকর সিদ্দিক।
মন্তব্য করুন