বিশ্বব্যাপী ফুসফুস-সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে ফোরাম অব ইন্টারন্যাশনাল রেসপিরেটরি সোসাইটি দিনটিকে ফুসফুস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য - "নির্মল বায়ু ও সুস্থ ফুসফুস সবার জন্য"। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়েছে।
মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি হলো ফুসফুস, যা শ্বাস-প্রশাসের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই শ্বাস যন্ত্রটির প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। সুস্থ ফুসফুস ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনাও করা যায় না। ফুসফুসের যেকোনো অসুস্থতা বা সংক্রমণ রোগীকে শ্বাসকষ্ট ও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা এমনকি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। তাই ফুসফুসের যত্ন নেওয়া তথা বিভিন্ন রোগ থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করা একান্ত আবশ্যক, যার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সবার জন্য পালনীয়।
ধূমপান পরিহার করতে হবে ফুসফুসের যত্নের কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় ”ধূমপান”পরিহারের কথা। ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কোষ স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দুর্বল হয়ে থাকে বলে তাদের শ্বাসনতন্ত্রের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও সবার থেকে বেশি থাকে। তাই ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ধূমপান ত্যাগ করা একান্ত আবশ্যক।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস করতে হবে ফুসফুসের সুস্থতায় খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব আছে। ভিটামিন এ, সি, ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং সোডিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আদা, হলুদ, রঙিন শাকসবজি, তৈলাক্ত মাছ, ডিম, টকফল, সরিষা, আমলকী, আপেল, গাজর, বাদাম, কমলা, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল আছে। এসব অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে উজ্জীবিত করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে কোষ ধ্বংস প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ফুসফুস তথা পুরো দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করে। এসব খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, যা ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির পাশাপাশি দেহকে টক্সিনমুক্ত করতে এবং কোষকে উজ্জীবিত রাখতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে ফুসফুস ভালো রাখতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে দেহে প্রচুর অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং বারবার সম্প্রসারণ-প্রসারণের ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট জোর কদমে হাঁটা, প্রাণায়াম, মেডিটেশন, বড় করে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়া ইত্যাদি ব্রিদিং এক্সারসাইজ (স্বাদের শ্বাসের ব্যায়াম) ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা নির্বিঘ্ন ঘুমও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
বায়ুদূষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এড়িয়ে চলা ফুসফুসের রোগে বায়ুদূষণের প্রভাব যথেষ্ট বেশি। দূষিত বাতির বায়ুর নানা বিষাক্ত উপাদান ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও ঘন জনবসতি বা অবস্থান শ্বাসতন্ত্র তথা ফুসফুসের রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব পরিস্থিতি থেকে নিজেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়াও হাঁচি-কাঁশির সময় স্বাস্থ্যসম্মত শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।
নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম তাদের ফুসফুসের সংক্রমণ তথা মারাত্মক ক্ষতি হতে রক্ষার জন্য প্রয়োজন মোতাবেক নিয়মিত নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধক টিকা নেওয়া অতীব জরুরি। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে সচেতন হতে হবে, পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে রাখাও জরুরি।
অধ্যাপক ডা. মো. খায়রুল আনাম: পরিচালক ও অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন; জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
মন্তব্য করুন