বিশ্বের চলমান গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে যোগ দিয়েছে দেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে তরুণ জলবায়ু আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একশনএইড বাংলাদেশের যুব প্ল্যাটফর্ম এক্টিভিস্টা বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে দেশ ও বৈশ্বিক বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থা, ব্যাংক এবং বেসরকারি সেক্টরের কাছে এ আহ্বান জানানো হয়।
এ গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক থেকে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর ও ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের কাছে দাবি জানানো হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ শেষে র্যালি শুরু করে শিক্ষা ভবন প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে সমবেত হন পাঁচ শতাধিক স্লোগানমুখর জলবায়ু যোদ্ধারা। সেখানে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন কার্যক্রমের সমাপ্তি টানা হয়।
সমাবেশে আন্দোলনকারীরা জানান, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এ পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফাই মুখ্য। এটি পৃথিবীতে বাস্তুতন্ত্র এবং জলবায়ুকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এ অবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান এসেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে।
জলবায়ু সংকট নিরসন, এ বিষয়ে ন্যায়বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে একশনএইড বাংলাদেশ ও এক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ২০টি সংগঠনের পাঁচ শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী এই স্ট্রাইকে অংশ নেন। একই সময় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ভোলা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারি, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, বরিশাল, টেকনাফ এবং বরগুনাসহ ২১টি জেলায় এবং বেশকিছু লোকাল ইয়ুথ হাবের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরাও গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে সংহতি প্রকাশ করেন।
এ প্রাণবন্ত ও শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক এবং পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানান। এ সময় এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এ মর্মে ‘ফিক্স দ্য ফাইন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো’, ‘ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ এবং ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগকরন’সহ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন স্ট্রাইকে যোগ দেওয়া জলবায়ু আন্দোলনকারীরা।
তরুণ জলবায়ু কর্মী ফাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আজ আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবিতে লড়াই করছি। বিত্তবানদের মুনাফা ক্ষুধার মানসিকতা আমাদের ব্যথিত করছে। লোভী এ স্বার্থের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ সংকটে ফেলতে পারি না। তাই আমরা টেকসই ও নিরাপদ পৃথিবীর দাবিতে একত্র হয়েছি।’
তরুণ জলবায়ু কর্মীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে একশনএইড বাংলাদেশের ইয়াং পিপল টিম লিড মো. নাজমুল আহসান বলেন, ‘আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নকে অবসান করা এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ও জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বাড়ানোয় প্রাধান্য দেওয়ার দাবিতে আওয়াজ তুলছি। এখন কথা বলার সময় নয়, শুধু কর্মের সময়। আমরা এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি যেখানে কোনো লোভ এ পৃথিবী ও তার মানুষদের মঙ্গলকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না।’
এ সময় জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিতে উত্তরের দেশগুলোর কাছে দায়বদ্ধতা নিয়ে টেকসই সবুজ বিশ্ব রূপান্তরে প্রযুক্তি ও রিসোর্স বিনিময় করার আহ্বানও জানান তিনি।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘বৈশ্বিক যুব-নেতৃত্বাধীন জলবায়ু আন্দোলনের পাশে আছে একশনএইড বাংলাদেশ। জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিতে কাজ করা সারা দেশের তরুণ জলবায়ু কর্মী ও তাদের প্ল্যাটফর্মদের সহায়তা করে আসছি। যেহেতু বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। সেহেতু আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ ও টেকসই সবুজায়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি জানাই। একইসাথে আমরা ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং চলমান নৃশংস যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাই। আমরা তরুণদের সঙ্গে সবাই একসাথে আরও ন্যায্য, জলবায়ুবান্ধব এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান রাখতে চাই।’
এ সময় ফিলিস্তিনে চলমান অমানবিক যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। যুদ্ধে অসংখ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধের মৃত্যুতে গভীর সহানুভূতি ও শোক প্রকাশ করা হয়।
মন্তব্য করুন