প্রতিবছর ২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় বিশ্ব ধরিত্রী দিবস, যার মূল উদ্দেশ্য হলো- পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা তৈরি ও সবাইকে একটি টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়া।
২০২৫ সালের ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী’- এই প্রতিপাদ্য স্মরণ করিয়ে দেয়, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।
ইতিহাস
বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের সূচনা ঘটে ১৯৭০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনেটরের উদ্যোগে। প্রথমবারের মতো তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশদূষণ, বন উজাড় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির প্রয়াস নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিবসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং এখন ১৯০টিরও বেশি দেশে এটি পালন করা হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, অস্বাভাবিক গরম, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি- এসব সংকট আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি। তবে আমাদের দেশের ভেতরেই রয়েছে পরিবেশ রক্ষার বিপুল সম্ভাবনা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন- সৌর, বায়ু ও জৈবজ্বালানির ব্যবহার বাড়ালে একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তৈরি হবে টেকসই জীবনব্যবস্থা।
প্লাস্টিক দূষণ আজ বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটে পরিণত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (WWF) জানায়, প্রতি বছর প্রায় এক লাখ সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিকের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে। চলতি ধারায় পরিবর্তন না এলে, ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের তুলনায় বেশি থাকবে প্লাস্টিক! বাংলাদেশও এই সমস্যায় পিছিয়ে নেই। প্রতিদিন দেশের ভেতর দিয়ে ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে পৌঁছাচ্ছে। এই পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
দেশের নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদে পরিচালিত এক গবেষণায় ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতি বর্গকিলোমিটার পানিতে পাওয়া গেছে ২৫ লক্ষাধিক ভাসমান মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। নদীর তলদেশে প্রতি কেজি মাটিতে রয়েছে গড়ে সাড়ে ৪০০টি প্লাস্টিক কণা। এমনকি মাছের পেটেও শনাক্ত হয়েছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা।
এ ছাড়া ২৫ মার্চ প্রকাশিত এক গবেষণায় হবিগঞ্জ জেলার সুতাং নদ ও হাওর অঞ্চলের ধানেও মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকার প্রমাণ মিলেছে। গবেষকরা বলছেন, এই প্লাস্টিক কণাগুলো ধীরে ধীরে আমাদের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি।
সাম্প্রতিক গবেষণায় আশঙ্কাজনক তথ্য উঠে এসেছে- পশুর ও বুড়িগঙ্গা নদীর পানি, মাটি ও মাছের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শুধু নদনদী নয়, এবার মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ব্যবহৃত বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত আটাতেও এই ক্ষতিকর প্লাস্টিকের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এর মানে, মানুষের খাদ্যচক্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ ও পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, সরকার ধীরে ধীরে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। পলিথিন ব্যাগ বন্ধে আমরা সুপারশপগুলোতে কিছুটা সফল হলেও অন্যখাতে এখনো অনেক কাজ বাকি।
তিনি বলেন, পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে এখনো অনেকেই সচেতন নন। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার বলে মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন