দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু অভিযোজন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় আর্থ রিমোট সেনসিং প্রযুক্তির ব্যবহার ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকায় শুরু হলো দুই দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। আগামীকাল দিনব্যাপী কর্মশালার মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শেষ হবে। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ভূগোলবিদ, জলবায়ু ও পরিবেশ বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং গবেষকরা অংশগ্রহণ করেছেন।
‘এনহ্যান্সিং ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স থ্রু আর্থ অবজারভেশন ইন দ্য সাউথ এশিয়ান রিজিয়ন’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং সেন্টার ফর ক্লাইমেট সোসাইটি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিসিএসই), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সিথ্রিইআর) এবং চীনের অ্যারোস্পেস ইনফরমেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআইআরসিএএস)। এই উদ্যোগে সমর্থন দেয় এশিয়া ওশেনিয়া অঞ্চলের জন্য গঠিত গ্রুপ অব আর্থ অবজারভেশন (এওজিইও), চায়না সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এক্সচেঞ্জ সেন্টার (সিএসটিইসি), এবং এএজিইওর অধীনস্থ রিজিওনাল ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরসিসিডি)।
কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। এছাড়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, পিএইচডি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম, অক্সফামের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ ডামলে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ, চীন, যুক্তরাজ্য ও নেপালের স্বনামধন্য গবেষক ও বিজ্ঞানীরা যুক্ত হন। এ সময় বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি, বন ও পানিসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় আর্থ অবজারভেশনের ভূমিকা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দূর অনুধাবন ও ভূ-তাত্ত্বিক তথ্যপ্রযুক্তি জলবায়ু অভিযোজন ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন প্রবণতা বোঝা, দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া এবং নীতিনির্ধারণে উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পৃথিবী পর্যবেক্ষণ এখন সময়ের দাবি।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভূগোলবিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন শুধু শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র নয়, বরং জলবায়ু অভিযোজনের সহায়ক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বেইজিং নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়ানজুন উ বলেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করলে এই অঞ্চলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। আমাদের যৌথ গবেষণা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের এই প্রয়াস আরও গভীর হতে হবে।
এছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও নীতিমালায় সমন্বয় আনতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে জবির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন, এই কর্মশালার মূল লক্ষ্য হলো তরুণ গবেষকদের হাতে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি ও জিও-ইনফরমেশন সিস্টেমের ব্যবহারিক জ্ঞান তুলে দেওয়া। এটি আমাদের অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই উন্নয়নের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। পৃথিবী পর্যবেক্ষণভিত্তিক গবেষণা ও প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এদিন কর্মশালায় বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. ডেবিড ডাওল্যান্ড, ডিরেক্টর জেনারেল গাও শিয়াং, সায়েন্টিফিক ও টেকনিক্যাল অফিসার মিস ওয়েনবো চু, কো-চেয়ার অধ্যাপক শিংফা গু ও ড. রাজেশ বাহাদুর থাপা, সিসিএসই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ড. মো. আব্দুল মালেক, উপপরিচালক ড. রিফাত মাহমুদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন