রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আলোচনা সভায় বক্তারা

বনাঞ্চল ধ্বংসের প্রধান কারণ মেগাপ্রকল্প

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলন। ছবি : কালবেলা
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলন। ছবি : কালবেলা

সরকারি-বেসরকারি মেগাপ্রকল্পের কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে বনের জায়গা দখল করে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। কলকারখানা, রিসোর্ট, আবাসনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যা বনাঞ্চল ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘বন, পাহাড়, উপকূল, ও আদিবাসী অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা।

বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খানের সভাপতিত্বে সভায় ধারণাপত্র উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম। বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সঞ্চালনায় সভায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন কনা ও অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী, আদিবাসী নেতা দীপায়ন খীসা প্রমুখ।

সভায় উত্থাপিত ধারণাপত্রে ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও আমাদের সরকারি হিসাবে আছে ১৩ শতাংশ। বাস্তবে আরও কম। গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে পাহাড়ে ৩০ শতাংশ বনভূমি কমেছে। যার অন্যতম কারণ শিল্পায়ন ও নগরায়ণ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাও বনের জায়গায় বিশাল বিশাল প্রকল্প করেছে। বনের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে হরেক ধরনের রিসোর্ট। যা বনের গাছপালা শুধু নয়, বনের প্রাণ-প্রকৃতিও নষ্ট করছে।

লবণাক্ততার আগ্রাসনে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এক সময়ে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, হেক্টরপ্রতি ১২০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হবে। যে কারণে চিংড়ি চাষের প্রসার ঘটে। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের বদলে আমরা লবণ পেয়েছি। আর লবণাক্ততার প্রভাবে চকোরিয়া সুন্দরবন বিলীন হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এরপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবেশের এই সংকটের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের থেকে আমাদের দায় কম নয়।

বাপা নেতা ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, দখল ও দূষণের কারণে উপকূলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রকৃতি দুর্যোগ বেড়েছে। প্রতিবছরই পাহাড় ধ্বংসের ঘটনা ঘটছে। বন্যার প্রকোপও বেড়েছে। নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু দখল-দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই।

আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, অদূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে ভূমি ও ভূ-প্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে পাহাড়, উপকূলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় যে কোনো প্রকল্প গ্রহণে স্থানীয় ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। সব এলাকার জন্য একই প্রকল্প সুফল দেবে না।

বিশেষায়িত অঞ্চলের জন্য স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের চিরায়ত জ্ঞানকে প্রাধান্য দিতে হবে।

অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন কনা বলেন, যে ব্যবস্থাপনা আমাদের বনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেই ব্যবস্থাপনা আমরা চাই না। আদিবাসীরা ৮৫ শতাংশ বন রক্ষা করে থাকে। অথচ তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বন ও ভূমি বিপর্যয় থেকে রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, উপকূল সর্বদাই বঞ্চিত। উপকূলের চারপাশে পানি হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলমান। পানির কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা, দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় নদীগুলো। সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধভাবে ব্লক ও বাঁধ দিয়ে উপকূল রক্ষা করার নামের অনিয়ম বন্ধ, উপকূলের নিষিদ্ধ জাল নির্মূল ও জেলেদের পুনর্বাসন জরুরি।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ’ বিশেষ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বাপা সহসভাপতি খুশি কবির। ধারণাপত্র উত্থাপন করেন পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল আলম। সর্বশেষ অধিবেশনে ‘জ্বালানি, বিদ্যুৎ, ও জলবায়ু পরিবর্তন’ নিয়ে আলোচনা হয়।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে ওই সভায় মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন বাপার কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন। সভায় দেশি-বিদেশি পরিবেশ বিজ্ঞানী, গবেষক ও সারাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা মতামত তুলে ধরেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের প্রস্তাব গৃহীত হবে।

গতকাল শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সীমান্তে উত্তেজনার প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক কমিটির বিক্ষোভ মিছিল

জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে ঢাবি সাদা দলের শুভেচ্ছা

স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় প্রাণ গেলো স্ত্রীর

আজ থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর

বৈষম্য বিলোপে অন্তর্বর্তী সরকারের মনোযোগ দেখা যাচ্ছে না : সাইফুল

যুবদল নেতার উপর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার হামলা

‘মানুষ ভাবছে আমাদের বিপ্লব বেহাত হয়ে গেল’

ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে নাটোর উৎসব সম্পন্ন

প্রথম দিনে যেসব নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন ট্রাম্প

১০

চট্টগ্রামসহ সারা দেশের পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধ করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

১১

ষড়যন্ত্রকারীদের কোনোভাবেই সুযোগ দেওয়া যাবে না : শামা ওবায়েদ

১২

ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশে হামলার হুমকি দিয়েছেন কি?

১৩

ফরিদপুর যুবদল নেতা নুরুল আলম বহিষ্কার

১৪

সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশকে দুভাগ করা যাবে না : সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা

১৫

রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন / বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য প্রচারে ৭২ ভারতীয় গণমাধ্যম

১৬

তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

১৭

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের মতবিনিময়

১৮

বিসিসিআইয়ের ১০ দফা নিয়ম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে রোহিতের ক্ষোভ

১৯

নির্বাচনের ঘোষণা তাড়াতাড়ি চান মির্জা ফখরুল

২০
X