কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নদীদূষণ ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে : গবেষণা

রাজধানীর বুড়িগঙ্গায় দূষিত পানি। ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর বুড়িগঙ্গায় দূষিত পানি। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের নদীগুলোতে ভারী ধাতুর কারণে দূষণের মাত্রা ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। চলতি বছরের ১২ জুলাই ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য দেখা গেছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০টি ভারী ধাতুর (এএস, পিবি, সিডি, সিআর, এফই, এমএন, সিইউ, সিইউ, সিও, এনআই, জেডএন) দূষণের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেশের জলপথের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ একটি একাডেমিক জার্নাল। এটি জার্মানিভিত্তিক স্প্রিংগার নেচারের শাখা স্প্রিংগার প্রকাশ করে। দেবাশীষ পণ্ডিত ও মোহাম্মদ মাহফুজুল হকসহ একদল বিশেষজ্ঞ প্রিজমা ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে পদ্ধতিগতভাবে ৫৫টি নথি পর্যালোচনা করেছেন।

গবেষণার ফলাফল দেখা যায়, ২০০১-২০১০ সালে যে পরিমাণ দূষণ হয়েছিল, সেই তুলনায় গত দশকের (২০১১-২০২০) দূষণের মাত্রা অনেক খারাপ ছিল। লক্ষণীয় বিষয় হলো- ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

গবেষণায় প্রধানত ৩টি বিভাগের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেগুলো- ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম। এসব এলাকার নদীগুলোর বেশিরভাগে ভারি ধাতুর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইউএসইপিএ) এবং বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আর্সেনিক (এএস), সীসা (পিবি), ক্যাডমিয়াম (সিডি), ক্রোমিয়াম (সিআর), লোহা (এফই) ও ম্যাঙ্গানিজের (এমএন) গড় ঘনত্ব তিনটি ঋতুতেই গ্রহণযোগ্য সীমা ছাড়িয়ে যায়। আর গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সর্বাধিক দূষণ হয়।

ট্যানারি, টেক্সটাইল ও ইলেক্ট্রোপ্লেটিং কারখানাসহ শিল্প কারখানার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা। এসব শিল্প কারখানা ভারি ধাতুসম্পন্ন অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়। এটি পরিবেশগত মারাত্মক সংকট তৈরি করে এবং যা বছরের পর বছর ধরে খারাপ হয়ে চলেছে।

গবেষণায় ভারি ধাতু দূষণের একাধিক উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক আবহাওয়া সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলোর পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কৃষি থেকে সার ও কীটনাশক, খনন, ইলেকট্রোপ্লেটিং, বস্ত্রশিল্প, কয়লা খনি ও শিল্প বর্জ্য যেমন ব্যাটারি ও রং নদীর পানির দূষণের গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এসব দূষক বাস্তুতন্ত্রে জমা হয়, যা জলজ জীববৈচিত্র্য, মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে।

গবেষণায় দূষণ রোধে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- পানিসম্পদ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিল্প সংশ্লিষ্টদের ও জনগণকে শিক্ষিত করতে অব্যাহত পর্যবেক্ষণ, ব্যাপক গবেষণা এবং সচেতনতামূলক প্রচার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী অববাহিকা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে; যা টেকসই সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করে। দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের নদীগুলো অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

এই গবেষণার অন্যতম গবেষক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড জানান, আমাদের নদীগুলোতে বিশেষ করে ঢাকার মতো অঞ্চলে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ভারি ধাতু জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তুরস্কে বিজয়ী বাংলাদেশি হাফেজ মুয়াজকে চরমোনাই পীরের অভিনন্দন

সরকারি রাস্তা দখল, ভোগান্তিতে ২২ পরিবার!

আ.লীগ দেশের মানুষের জন্য আতঙ্ক : টুকু

মিরপুরে যৌথবাহিনীর সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ, আসামি সহস্রাধিক

‘শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন করলে শিল্পাঞ্চলে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরবে না’

স্বপ্ন-তে ১৬০ টাকায় গরুর মাংস-আলু মিক্স কম্বো!

চাঁদাবাজির সময় সেনাবাহিনীর হাতে বিএনপির ৪ সমর্থক আটক 

জানা গেল বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের কারণ

আহত শামীমার দিন কাটছে ভীষণ অভাবে আর কষ্টে

আফ্রিকা ভ্রমণ আগ্রহীদের জন্য সুখবর

১০

কাকরাইলে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা

১১

যথাসময়ে নির্মাণকাজ শেষ করায় ঠিকাদারকে পুরস্কার

১২

নতুন কোচ পেল ম্যানইউ

১৩

চার শতাধিক নেতাকর্মীসহ জাপা নেতার পদত্যাগ

১৪

সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম

১৫

ভারতে পালানোর সময় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৬

চোখ নয়, মনের আলো দিয়ে চলেন মিজান

১৭

মেট্রোরেলের এমআরটি পাস রেজিস্ট্রেশন বন্ধ ঘোষণা

১৮

সাবেক গৃহায়ন মন্ত্রীর ফাঁসির দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ

১৯

আ.লীগের করা ৪টি নির্বাচনই অবৈধ : দুলু

২০
X