রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মিত্রবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার চরিত্রে একযুগ ধরে অভিনয় করছেন অমিতাভ রায়।
প্রতি বছরের মতো এবারও বিজয় দিবস উপলক্ষে রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে মঞ্চস্থ করা হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। যথারীতি অরোরার চরিত্রে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কাস্টমস কর্মকর্তা অমিতাভ।
১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। ভারতীয় ও বাংলাদেশি বাহিনীর যুগ্ম কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী।
বিজয়ের এই বিশেষ ক্ষণকে স্মরণ করার জন্য ২০০৮ সাল থেকে আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানটি একই স্থানে, একই সময়ে মঞ্চস্থ করার আয়োজন করে আসছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ-’৭১। তবে কোভিডের তিন বছর অনুষ্ঠানটি হয়নি। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করলেও এখন তা মঞ্চস্থ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদ।
আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানটি মঞ্চস্থ করার জন্য প্রায় ২০ জন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। সময়ের সঙ্গে চরিত্রগুলোর জন্য অভিনেতা পরিবর্তন হলেও লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার চরিত্রটি একাধারে করে আসছেন অমিতাভ। নাট্যকলার ছাত্র থাকা অবস্থাতেই এই চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনে প্রবেশের পরও তিনি প্রতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর অরোরার চরিত্রে রেসকোর্স ময়দানে হাজির হন।
দীর্ঘ সময় ধরে অরোরার চরিত্রে অভিনয় করে যেতে পারায় উচ্ছ্বসিত অমিতাভ। তিনি কালবেলাকে বলেন, একই স্থানে, একই আবহে আত্মসমর্পণের ঘটনাটি পুনঃস্থাপন করা হয়। সাধারণ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা অনুষ্ঠানে থাকেন। সাইন করার পর সবাই মিলে জয় বাংলা বলে যখন স্লোগান দেয়, তখনকার অনুভূতি অন্য কিছুর সঙ্গে মেলানো যায় না। মনে হয়, এটা সেই বিজয়ের ক্ষণ। এটা খুবই বিশেষ মুহূর্ত। এই মুহূর্তটাই আমাকে বারবার টেনে আনে।
অমিতাভ বলেন, প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী মাঠে এই অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আসেন। অনুষ্ঠান শেষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার বেশে থাকা আমার সঙ্গে তারা ছবি তোলেন। অনেকে এই ছবিটা তাদের বাড়িতে বাঁধিয়ে রাখেন। কারণ তারা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই রেসকোর্স ময়দানে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এসেছিলেন কিন্তু তারা অরোরা বা অন্য কারও সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পাননি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভালোবেসে আমার সঙ্গে ছবি তুলেন। যেটা এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে খুবই সম্মানের।
আত্মসমর্পণ দৃশ্যে লেফট্যানেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার চরিত্র রূপায়ণ করেন অমিতাভ রায়, লেফট্যানেন্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজির চরিত্রে সুমন মিয়া, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার বীরউত্তম চরিত্রে কাজী সাজ্জাদুর রহমান ও মেজর এটিএম হায়দার বীরউত্তম চরিত্রে ছিলেন সাফিন উজ জামান। এ ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন লিপটন ইসলাম, খন্দকার মোহাম্মদ লেনিন, দিগার মোহাম্মদ কৌশিক, নাজমুল হোসেন, তাপস সরকার, এমদাদুল হক বাঁধন ও সৈয়দ হাসিবুল হাসান নাসিফ।
মন্তব্য করুন