পড়ালেখার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ওয়েবসিরিজ ‘শাটিকাপ’ ওয়েব সিরিজের অভিনয়শিল্পীরা এবার আলোচনায়। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিনের ন্যায় ‘শাটিকাপ’ অভিনেতা আকাশ, রিফাত ও ফাজুসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী গত ১৭ আগস্ট রাতে রাজশাহী শহরে টহল ডিউটিতে ছিলেন। ওই দিন ভোর রাতে তারা নগরীর ভদ্রা এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন এটি কোনো খালি ব্যাগ। পরে বুঝতে পারেন, ব্যাগে ভারী কিছু রয়েছে। খুলে দেখেন কয়েক বান্ডিল টাকা। একপর্যায়ে গুণে দেখা যায় ব্যাগটিতে ১৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা রয়েছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) উদ্ধারকৃত টাকাগুলো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় জমা দেন অভিনেতারা। ‘শাটিকাপ’ ওয়েব সিরিজের এই অভিনয় শিল্পীদের এমন উদারতা ও সরল বিশ্বাসের ঘটনাটি রাজশাহীসহ সারা দেশে আলোড়ন তৈরি করে। এমন মহৎ কাজের জন্য সোমবার (১৯ আগস্ট) তাদের র্যাব-৫ এর পক্ষ থেকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ১৮ লাখ টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার পর কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অভিনয়শিল্পীরা। পরে কিছু ভেবে না পেয়ে ‘শাটিকাপ’ ওয়েব সিরিজের নির্মাতা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামকে ফোন দেওয়া হয়। সবাই মিলে টাকাগুলো থানায় জমা দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়।
নাটোরের সিংড়ার রহমত ইকবাল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিনেতা আকাশ বিন ওসামা বলেন, ‘আমরা তো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কী করব? একরকম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ব্যাগটি নিয়ে আমরা নগরীর ভদ্রা এলাকার ওই গলি থেকে বের হই। আমরা যেহেতু শুরু থেকে শায়িক (মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম) ভাইয়ের পরামর্শে কাজ করছি। ভাইকে ফোন দিই। ভাই আমাদের সব বুঝিয়ে দেন, কী করতে হবে। সেভাবেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে নেই। তবে খুবই সাবধান ছিলাম, টাকাগুলো যেন কারো হাতে না পড়ে। আর কোলাহল যেন না তৈরি হয়।’
তিনি বলেন রোববার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নগরীর বড়কুঠি ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল আলম এবং সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার ইকবাল হোসেনের উপস্থিতিতে টাকাগুলো বোয়ালিয়া মডেল থানায় জমা দেওয়া হয়।
বোয়ালিয়া থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘পরিত্যক্ত টাকা, এটা সন্দেহজনক। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করব। সঙ্গে একটি কাপ পাওয়া গেছে। সেটা আমরা পরীক্ষা করিয়েছি, এটা পিতলের কাপ। সেখানে ১৮টি বড় ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরও কিছু ছিদ্র কেন, সেটারও খতিয়ে দেখা হবে।’
মাসুদ পারভেজ জানান, অর্থ ট্রেজারিতে টাকাগুলো জমা দেওয়া হয়েছে। তবে ছয় মাসের মধ্যে অর্থের যদি বৈধ কোনো মালিকানা দাবি করা কাউকে পাওয়া যায়, তাহলে প্রমাণ, অর্থের উৎস জানার পর সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর কাউকে না পাওয়া গেলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা থাকবে।
এদিকে র্যাবের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীরা কুড়িয়ে পাওয়া ১৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার মত এমন ভালো কাজ করায় সোমবার দুপুরে তাদেরকে র্যাব-৫ এর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।