দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড জলের গান। যাদের গানের মধ্যে রয়েছে সমাজ, মানুষ, পশু-পাখি ও প্রকৃতির কথা। সেই দলের প্রধান রাহুল আনন্দ। যিনি নিজস্ব ঢঙে গান পরিবেশন করে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে। নিজেই তৈরি করেছেন কয়েশ বাদ্যযন্ত্র আর সে বাদ্যযন্ত্রের সুর পৌঁছে গেছে বিশ্বব্যাপী।
তবে যেই বাসাতে বসে তিনি তৈরি করেছেন বাদ্যযন্ত্র, যার সুর পৌঁছেছে বিশ্ব দরবারে সেই স্থান থেকে এখন বের হচ্ছে আগুনে পোড়া গন্ধ। গত ৫ আগস্ট ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সে সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একই সময় হামলার শিকার হয় জলের গানের রাহুল আনন্দের বাড়িতে। শুধু ভাঙচুরই নয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুরো বাড়িটাই।
এতদিন বাসাটি রাহুল আনন্দের শোনা গেলেও আসলে তিনি ওই বাসাতে ভাড়া থাকতেন। একপাশে ছিল তাদের সংসার, আর অন্য পাশে জলের গানের স্টুডিও। তবে জীবন্ত এক নক্ষত্রের আজীবনের স্বপ্নপুড়ে ছাই হয়েছে। রেহাই পেয়েছেন রাহুল আনন্দ ও তার পরিবারের সদস্যরা। তার আজীবনের সাধনার এ বীভৎস পরিণতি দেখে স্তব্ধ হয়েছেন অনেকে।
যদিও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, পরিকল্পিতভাবে এ আগুন দেওয়া হয়। এক সাক্ষাৎকারে রাহুল আনন্দ জানান, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে কোনো মতে বের হয়ে এসেছেন। তবে এখন শোনা যাচ্ছে ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে বিস্তারিত সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন রাহুল আনন্দের পারিবারিক বন্ধু ফারহানা হামিদ। লেখাটি জলের গানের ফেসবুক পেজেও শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টে ফারহানা হামিদ লিখেছেন, ‘রাহুল আনন্দের বাসা উদ্দেশ্য করে আগুন দেওয়া, লুটপাট বা ভাঙচুর করা হয়নি। আগুন দেওয়া হয়েছে ৩২-এর ‘বর্তমান বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ’-টুকুতে। রাহুলদা একটা একতলা বাসায় ভাড়া থাকতেন। একপাশে তাদের সংসার, অন্য পাশে জলের গানের স্টুডিও। অনেকের ভিডিওতে এ বাসাটা নিয়ে ভুলভাল কথা বলতে দেখেছি আমি। সেই বাসাটি ব্যক্তি মালিকানায় ছিল। ৩২-এর সেখানে আরও অনেক এমন বাসা আছে। রাহুলদা ও তার পরিবারের দুর্ভাগ্য এ মায়াময় বাসাটা নতুন মিউজিয়ামের দেয়াল ঘেঁষে এবং সান্তুরের পেছনে ছিল, তাই তার বাসাতেও আগুন দেওয়া হয়।
ফারহানা হামিদ আরও লিখেছেন, ‘রাহুলদাকে উদ্দেশ্য করে আগুন দিলে তারা এ পরিবারকে এভাবে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিত না। আর সুযোগ না দিলে সেই বাসা থেকে বের হওয়াও ছিল অসম্ভব। রাহুলদার বাসায় আগুনের সঙ্গে রাহুলদার ধর্ম, বর্ণ, জাত, সংস্কৃতি-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এমন গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করছি। দেশের এই পরিস্থিতিতে যে কোনো গুজব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা সচেতন হই।
তিনি আরও লিখেছেন, একটা সংসার, একটা দলের বহুদিনের সাধনা, একজন বাচ্চার শৈশরের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর কারও কোনো কিছু পুড়ে না যাক। ভালোবাসা নেমে আসুক মানুষের মনে, আপনারা তাদের পাশে থাকলে আবার ‘জলের গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান গাইবো- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।
মন্তব্য করুন