বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স। যেখানে দেশের সিনেমার পাশাপাশি বিদেশি সিনেমাও মুক্তি দেওয়া হয়। উন্নত মানের স্ক্রিন ও মনোরম পরিবেশের জন্য এখানকার দর্শকদের চড়া মূল্য দিয়ে সিনেমা দেখতে হয়। সেই সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে এবার গুরুতর অভিযোগ আনলেন দেশের দুই নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ ও মোহাম্মদ ইকবাল। ক্ষোভ ঝাড়লেন তাদের ব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম নিয়ে।
আলোচনাটি শুরু হয় নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদের সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘শ্যামা কাব্য’ নিয়ে। গেল শুক্রবার (৩ মে) এটি মুক্তি পায় স্টার সিনেপ্লেক্সে। মুক্তির তিন দিনের মাথায় রোববার (৫ মে) নানা অভিযোগ এনে সিনেমাটি সিনেপ্লেক্স থেকে সরিয়ে নেন নির্মাতা।
এ সময় এক ভিডিও বার্তায় নির্মাতা সৌদ জানান প্রজেকশন সিস্টেমে সমস্যা, সেল রিপোর্টে গড় মিলসহ বেশকিছু কারণ। এরপর তিনি সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে মানসিক চাপ প্রয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখার তিন নম্বর হলের প্রজেকশন নিয়ে আপত্তি ছিল আমাদের। এরপর তারা আমাদের এক নম্বর হলে দিয়েছিল─যার প্রজেকশন কোয়ালিটি অনেকটাই ভালো। কিন্তু এক নম্বর হলে সিনেমাটি দেওয়ার পর প্রতিনিয়ত আমাকে কল দিয়ে তারা একটা মানসিক চাপ দিতে থাকে। আর বলতে থাকে সিনেমাটি না চললে তারা নামিয়ে দেবেন। আমি জানি সেটি। দর্শক না থাকলে এটা নামি দিতেই হবে স্বাভাবিক। কিন্তু এতবার বলার তো কিছু নেই। এরপর তারা আমাকে বলে, আপনি যেই প্রজেকশন নিয়ে অভিযোগ করছেন সেখানে শাকিব খানের সিনেমা হাউসফুল যাচ্ছে। এসব বিষয় আমার জন্য চরম অপমানের। কারণ আমার সিনেমায় বড় তারকা নেই। আর শাকিব বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা। তার সিনেমায় এমনিতেই দর্শক যাবে তার সঙ্গে তুলনা করে তো লাভ নেই। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও সত্য প্রজেকশন কোয়ালিটির উন্নতি হয়নি, দর্শকের সঙ্গে প্রতারণাই হচ্ছে। এটাও তো আমার প্রতি এক ধরনের মানসিক নির্যাতন।’
স্টার সিনেপ্লেক্সের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ দেশের আরেক নির্মাতা ও প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল।
তার সিনেমা ‘ডেডবডি’ ইতোমধ্যেই নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি সিনেপ্লেক্সের অনিয়ম নিয়ে এফডিসিতে মানববন্ধন করারও সিদ্ধান্ত নিয়ে কালবেলাকে ইকবাল জানান, ‘এরা বাংলা সিনেমার সঙ্গে বেঈমানি করছে। যেসব শাখায় দর্শক যায় না এবং টিকিটের দাম অনেক বেশি সেই হলগুলোতে তারা আমার ‘ডেডবডি’ দিয়েছে। এরপর তারা দর্শক না হওয়ার অভিযোগ আনছে। যা রীতিমতো অপরাধ। আপনি জানেন এখানে দর্শক যায় না। সেখানে বাংলা সিনেমা দিয়ে, যেখানে দর্শক হয় সেখানে ইংলিশ সিনেমা চালাবেন এটা কেমন কথা। দু’এক দিনের মধ্যে সিনেপ্লেক্সের অনিয়ম নিয়ে এফডিসিতে মানববন্ধন করব। একজন প্রযোজক-পরিচালক অনেক কষ্ট করে সিনেমা নির্মাণ করেন। যখন সিনেমাটি মুক্তি দিয়ে প্রতারণার শিকার হন তিনি তখন নির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বাংলা সিনেমা বাঁচাতে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হতে হবে।’
এই অভিযোগের বিষয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এটি নিয়ে আমরা এখনো অফিসিয়াল কোনো বক্তব্য দেইনি। তবে বেশকিছু পত্রিকায় কথা বলেছি। শুরুতেই আমি বলতে চাই- নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদের সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘শ্যামা কাব্য’ নিয়ে তারা যে অভিযোগ করেছিলেন সেটি আমরা আমলে নিয়ে তৃতীয় স্ক্রিন থেকে ১ নম্বর স্ক্রিনে নিয়ে আসি। তারপর রোববার তাদের ডিস্ট্রিবিউটর বঙ্গবিডি আমাদের বলেন, সিনেমাটি নামিয়ে ফেলতে বলায় আমরা সেটি নামিয়ে ফেলি। এরপর মোহাম্মদ ইকবালের ‘ডেডবডি’ সিনেমাটি আমরা আমাদের দ্বিতীয় জনপ্রিয় শাখা মিরপুরে দিই। যেখানে বসুন্ধরার পর সবচেয়ে বেশি দর্শক হয়। কিন্তু সিনেমাটি সেখানেও দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। এখন সিনেমা আমরা চালাতে পারব কিন্তু দর্শক তো এনে দিতে পারব না। ভালো কনটেন্ট হলে কিন্তু আমরা হলিউডের সিনেমা নামিয়ে দিয়ে বাংলা সিনেমা চালিয়েছি এর আগে। সেটি কিন্তু সবাই দেখেছে। তাই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কী লাভ। আপনারা ভালো সিনেমা বানালে অবশ্যই দর্শক আসবে। আর শুধু সিনেপ্লেক্সের দিকে অভিযোগের তীর না দিয়ে, সিঙ্গেল স্ক্রিনের খবরও নেওয়া দরকার সবার। যেসব হলে সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে সেখানে কেমন চলছে।’
ভৌতিক ঘরানার সিনেমা ‘ডেডবডি’র বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওমর সানী, জিয়াউল রোশান, শ্যামল মাওলা, ভারতীয় অভিনেত্রী অন্বেষা রায়সহ অনেকে।
মন্তব্য করুন