আহসান হাবীব
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুরস্কারপ্রাপ্তি অনেক বড় দায়িত্ব তৈরি করে : বাপ্পা মজুমদার

সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার। ছবি : সংগৃহীত
সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার। ছবি : সংগৃহীত

‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার ‘এ মন ভিজে ভিজে যায়’- গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার। নিজের অনুভূতি ও সংগীতের নানা বিষেয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন কালবেলার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহসান হাবীব

কালবেলা : আপনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন। অনুভূতি জানতে চাই।

বাপ্পা মজুমদার : নিঃসন্দেহে ভালো অনুভূতি। এটাতো যে কারও জন্যই অত্যন্ত সম্মানের ও ভালোলাগার। কিন্তু সেই সাথে যে কোনো পুরস্কার, সেটা ছোট হোক, বড় হোক- সেটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব তৈরি করে। আমরা যারা কাজ করি, যারা সম্মানিত হই, যারা এ ধরনের একটি স্বীকৃতি পাই, তখন প্রতিটা মোমেন্টে আমাদের নিজেদের প্রুফ করে নিতে হয়। ভবিষ্যতে যে কাজগুলো করব, যতদিনই করি না কেন, সেটার মান যেন সঠিক থাকে, আমরা যেন আরও বেটার কাজ করতে পারি, সেই ভাবনা নিয়ে মূলত আমরা আমাদের কাজগুলো এগিয়ে নিই।

কালবেলা : ২০১৯ সালে আপনি সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সংগীতশিল্পী হিসেবে আরও আগে কি বাপ্পা মজুমদারের ঝুড়িতে এই পুরস্কারটি যুক্ত হওয়ার দরকার ছিল?

বাপ্পা মজুমদার : আমি আসলে সেভাবে মনে করি না। কারণ সময়ে যেটা হওয়ার সেটাই হবে, হয়তো সময় তাই বলেছে। সে কারণেই হয়তো এত দেরি হয়েছে। কিন্তু সম্মানিত হয়েছি, আমি এই স্বীকৃতি পেয়েছি, এটাই আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।

কালবেলা : মা-বাবা সংগীতে যুক্ত ছিলেন। সংগীতজগৎ নিয়ে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। তারা সংগীতকে পেশা হিসেবে না নেওয়ার জন্য বলেছিলেন আপনাকে। আপনি তাদের অবাধ্য হয়ে সংগীতে এসে সফল হয়েছেন। সেই দিনগুলো কীভাবে স্মরণ করেন?

বাপ্পা মজুমদার : বাবার তো আসলেই খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের চর্চাটা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। উচ্চাঙ্গসংগীতের কদরটা কিন্তু বাংলাদেশের সেই অর্থে কখনোই হয়নি। সেই জায়গা থেকে বাবা-মা দুজনই ভীষণরকম সাফার করেছেন। সে ভয় থেকে শঙ্কা থেকেই তারা বলতেন, তুমি মিউজিক করো কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু মিউজিকটাকে পেশা করো না। সেই ভয়ের কারণেই নিষেধ করা মূলত, যে অনিশ্চিত একটি ভবিষ্যৎ। এখন তো সময় পাল্টেছে। এখন যারা কাজ করছে, তাদের সবাই পেশাগতভাবেই কাজ করছেন।

কালবেলা : বাবা-মায়ের সে কথাগুলোকে কখনো সত্য মনে হয়েছে, যে আসলেই এই প্রফেশনে না আসাই উচিত ছিল?

বাপ্পা মজুমদার : আমি সেভাবে মনে করি না। কিন্তু অনেকে মনে করেন। যারা করছেন তারা হয়তো সাফার করছেন, এজন্য তারা মনে করেন। আমার মনে হয় আমি হয়তো অনেক বেশি লাকি। কারণ আমার কাজকে মানুষ গ্রহণ করেছেন, শ্রোতারা গ্রহণ করেছেন। এখনো কাজ করে যাচ্ছি। এই গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য আমাদের কিন্তু প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়। প্রতিনিয়ত আমরা কিছু নিজেদের ডেভেলপ করার চেষ্টা করি। আমরা প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি। এটার মধ্যে থেকে থেকেই নিজেদের ডেভেলপ করতে হয়। আমি মনে করি বাবা-মা যেটা বলেছিলেন, তারা তাদের দিক থেকে ঠিক ছিলেন। আমি সংগীতকে ভালোবেসেছি সংগীতকে নিয়ে আছি। আমি ভীষণ সুখী ও হ্যাপি একজন মানুষ। যেটা আমার প্যাশন ছিল সেটাই আমার প্রফেশন। আমি ভীষণরকম আনন্দিত।

কালবেলা : বাংলাদেশের সংগীত এবং সংগীতশিল্পীরা কি কিছুটা অবহেলিত?

বাপ্পা মজুমদার : একটা বিষয় সত্য, আগে যেভাবে আমরা পাড়ায়-পাড়ায় গান শুনতাম, কোনো বাসায় হারমোনিয়াম বাজছে, কোনো জায়গায় সা-র-গা-মা হচ্ছে, কোনো ভাষায় তবলা বাজছে, এখন কিন্তু ঢাকা শহরে পার্টিকুলারলি এই ব্যাপারটাই নেই; একদমই ওঠে গেছে। পারিবারিকভাবেই কোনো না কোনোভাবে সংগীতকে পরিবারে সেইভাবে উপস্থাপন করা হয় না। সে কারণেই সংগীতের চর্চাটা পারিবারিকভাবে কমে গেছে। সেটার প্রভাব আমাদের মননে পড়ছে, মেধায় পড়ছে। যতদিন পর্যন্ত সেই কালচার আবার ফিরে না আসবে, ততদিন পর্যন্ত মিউজিক নিয়ে এক ধরনের সাফারিংস থাকবেই, এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা।

কালবেলা : সংগীতকে এমন বাক্সবন্দি করার কারণ কী?

বাপ্পা মজুমদার : সংগীতের প্রতি ভালোবাসার জায়গা, শ্রদ্ধার জায়গা এবং প্র্যাকটিস অনেক কমে গেছে। পাশের দেশে দেখি— যারা গান করতে আসেন, তারা কিন্তু শিখে আসেন। শিক্ষার প্রতি আমাদের ভীষণ রকম একটা অনীহা আছে; তবে শেখাটা খুব জরুরি। এটা যে কোনো মাধ্যমেই হোক না কেন। শেখাটাই মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায় এবং মানুষকে অনেক বেশি ম্যাচিউরড করে। আমার মনে হয় আমরা যদি আবার সেই শিক্ষা নেওয়া শুরু করি, আমরা যদি প্রপারলি স্কুলিংয়ের মধ্যে থাকি, অনেক বেটার কাজ করতে পারব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রুরা ওত পেতে আছে

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ গ্রেপ্তার

‘গণহত্যায় উসকানিদাতা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে’

জাবিতে গণধোলাইয়ের শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য

বৈদেশিক ঋণ আবার ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন নৌবাহিনীর ২শ’ সদস্য

সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু

ডিপিডিসি কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় সমিতির নতুন কমিটি

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হয়ে আলী রীয়াজের ফেসবুক স্ট্যাটাস

১০

আলজাজিরার অনুসন্ধান / যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ি কিনেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

১১

রূপপুর পারমাণবিকের প্রথম ইউনিটে ডামি ফুয়েল লোডিং শুরু

১২

মহেশখালী থেকে অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছে নৌবাহিনী

১৩

নকল সোনার মূর্তি দিয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ২

১৪

কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রবাসী যুবক নিহত

১৫

ভুল সংশোধনী ও দুঃখ প্রকাশ

১৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যানজট নিরসনে পুলিশের অভিযান

১৭

মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন গৃহবধূ শারমিন

১৮

সন্তানকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার অভিযোগ, সৎ মা আটক

১৯

বাকৃবিতে জৈব বর্জ্যের বিকল্প শিল্পায়ন বিষয়ে আলোচনা সভা

২০
X