‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। এতে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। গত ১৩ অক্টোবর থেকে সিনেমাটি দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলছে সগৌরবে। ঢাকার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে দেখা যায়, টিকিট না পেয়ে অনেক দর্শকই ফিরে যাচ্ছেন। সম্প্রতি সিনেমাটি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা হয় এই অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার। আলাপচারিতায় ছিলেন রবিউল ইসলাম রুবেল।
‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় তিশার চরিত্রটি নিয়ে বেশ শঙ্কা ছিল বলে জানান তিনি। বললেন, ‘এটা পিরিয়ডিক্যাল কাজ নয়। আগে যখন প্রীতিলতা, ডুব, ফাগুন হাওয়া, হালদা রিলিজ পেয়েছে তখনো নিজের মধ্যে একটা আশঙ্কা কাজ করেছে। সব শিল্পীরই একটা নার্ভাসনেস কাজ করে তার চরিত্র নিয়ে। কারণ আমরা একটা ক্যারেক্টার প্লে করেছি, সেটা দর্শক পছন্দ করবে কিনা। দর্শক ইমোশনালি অ্যাটাচ হবে কিনা। আমারও এই সিনেমায় ফজিলাতুন্নেছা চরিত্রটি করার পর আশঙ্কা কাজ করেছে। দর্শক পছন্দ করেছে এটাই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়।’
শুটিং সময়ের স্মৃতি জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এ সিনেমার শুটিংয়ের পুরো জার্নিটাই একটা স্মৃতি। খুবই কঠিন একটি গল্প নিয়ে শুটিং করেছি। এর মধ্যেও কিছু রিলিফের জায়গা ছিল, কিছু হাসি-ঠাট্টা আমরা করেছি।’
বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে ‘নারীদের শক্তি’ হিসেবে আখ্যা দেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। আলাপকালে জানালেন, ‘যখন এই সিনেমার শুটিং শুরু করি, তখন আমাদের বলা হয়েছিল ফজিলাতুন্নেছার নজরেই বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হবে। ফজিলাতুন্নেছার নজরে বঙ্গবন্ধু কেমন ছিল সেটাই কিন্তু সিনেমায় উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর পেছনে তার পরিবারের বড় সাপোর্ট আছে এবং অবশ্যই বঙ্গবন্ধু যেসব কাজ করেছেন, যেভাবে এগিয়ে গিয়েছেন, তার স্ত্রীর যদি সাপোর্ট না থাকত, তাহলে কেউই আসলে এত এগিয়ে যেত না। এটাই দেখানো হয়েছে এখানে।’
চরিত্রটি করতে গিয়ে কখনো কি মনে হয়েছে যে, আমাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত বা আমি পারছি না—প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘অবশ্যই না। ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। যারা আমাকে ছোট থেকে চেনেন, তারা জানেন আমি কখনো ছেড়ে দেওয়া শিখিনি। কাজেই ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। চরিত্রটি নিজের মধ্যে ধারণ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। শ্যাম বেনেগালের মতো এত ভালো একজন ডিরেক্টর সঙ্গে ছিলেন, তার একটা সাপোর্টিভ টিম ছিল। যে টিম আমাদের সবসময় সাপোর্ট করে গেছে, চরিত্রে থাকতে সাহায্য করেছে। পারিপার্শ্বিকতা এমন ছিল যে, আমার কাছে মনে হয়নি যাত্রাটা এত সুগম হতে পারে।’
‘শেখ ফজিলাতুন্নেছার চরিত্রটির শুটিং করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের মায়ের কথা জেনেছি, তখন একটু সারপ্রাইজ হয়েছি। কারণ, সে সময় এমন একটা মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। যিনি এতটা স্ট্রং, এতটা বুদ্ধিমত্তা রাখেন—একই সঙ্গে অনেক গুছানো একজন মানুষ। তিনি নারীদের শক্তি। যিনি রাজনীতি এবং সংসার দুটিই বুঝেন। তিনি জানেন, কোন মানুষের সামনে কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে এবং কী কথা বলতে হবে। অনেক অজানা কথা আমরা জানতে পেরেছি এ সিনেমা করতে গিয়ে। এমন একটি চরিত্রে কাজ করতে পেরে অবশ্যই অনেক ভালো লাগছে। এ ছাড়া এই চরিত্রে অভিনয় করতে অনেক বই পড়তে হয়েছে আমাকে’ বললেন পর্দার শেখ ফজিলাতুন্নেছা।
এই সিনেমায় নুসরাত ইমরোজ তিশা মাত্র এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আসলে পারিশ্রমিক প্রসঙ্গ সবসময় অ্যাভয়েড করে গিয়েছি। কখনো এ প্রসঙ্গটা তুলতে চাইনি। কিছু বিষয় নিজের কাছে থাকাই ভালো। এটা একটা ভালোবাসার ছবি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস জানানোর ছবি। এতেই আমি অনেক খুশি। কত টাকা নিচ্ছি, না নিচ্ছি এটা মুখ্য নয়। যেটাই নিয়েছি তাতে আমি ভীষণ খুশি।’
মন্তব্য করুন