জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক গীত। ‘কি কি জিনিস এনেছো দুলাল বিবি সখিনার লাইগা’ শিরোনামের এই গান ইতোমধ্যেই শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আঞ্চলিক এ গীতের মূল সংগ্রাহক গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের গৃহিণী রাশেদা বেগম। প্রায় ৫০ বছর ধরে তার সংগ্রহে আছে গানটি। একপর্যায়ে রাশিদা বেগমের ভাতিজা আলাল আহমেদের মাধ্যমে গানটি ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার সংলাপ তত্ত্বাবধায়ক সাধনা আহমেদের কাছে পৌঁছায়। এরসঙ্গে অবশ্য আরও চারটি গীত নেওয়া হয়েছিল রাশেদার থেকে। সম্প্রতি রাশেদা বেগম জানতে পারেন তার দেওয়া গীত ঠাঁই পেয়েছে জাতির জনকের বায়োপিকে। এরপর থেকে আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন তিনি ও তার পরিবার। রাশেদা বেগমের স্বামী ফিরোজ মোল্লা। এই দম্পতির রয়েছে চার সন্তান। পড়াশোনা জানেন না রাশেদা। ছোটবেলায় এই ধরনের কিছু গীত শিখেছেন তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গীত পরিবেশন করতেন রাশেদা।
২০২১ সালে রাশেদা বেগম তার ছেলের মাধ্যমে গীতগুলো খালি গলায় রেকর্ড করে তার ভাতিজা আলাল আহমেদের কাছে পাঠান। আলাল তা সাধনা আহমেদের কাছে পৌঁছে দেন। পরে সাধনা গীতগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী শুনে পাঁচটি গীতের মধ্যে ‘কি কি জিনিস এনেছো দুলাল বিবি সখিনার লাইগা’ শিরোনামের গীতটি সিনেমার জন্য নির্ধারণ করেন। এই গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের শিল্পী উর্মি হক।
নিজের সংগ্রহের গান ‘মুজিব’ বায়োপিকে ঠাঁই পাওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করছেন রাশেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘দুবছর আগে আমাকে বলছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি মুভি নির্মিত হচ্ছে, সেখানে এই গীত দেওয়া হবে। তখন আমি বুঝতে পারিনি। ভাবছি আলাল চেয়েছে তাই কিছু মনে না করেই দিয়ে দিয়েছি। কয়েকদিন আগে আমার মেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন দিয়ে জানায় আমার একটি গীত চলচ্চিত্রে ঠাঁই পেয়েছে। এরপর এলাকা থেকেও কয়েকজন আমাকে বলেছে। অনেকে মোবাইল থেকে সেই গীতটি শুনিয়েছে। তারপর আমার বিশ্বাস হয়েছে। আমার সংগ্রহের গান জাতির জনকের চলচ্চিত্রে ঠাঁই পাওয়ায় আমি খুব আনন্দিত। ইতিহাসের অংশ হওয়ায় গর্বিত আমি’।
রাশেদা বেগমের স্বামী ফিরোজ মোল্লা বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই’।
আলাল আহমেদ বলেন, ‘তখনো সিনেমার নাম নির্ধারণ হয়নি। কোনো একজনের মাধ্যমে সাধনা আহমেদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলার আঞ্চলিক ভাষার গীতের জন্য। আমার ফুফুর কাছ থেকে পাঁচটি গীত রেকর্ড করে নিয়ে সাধনা আহমেদের কাছে দিই’।
রাশেদা বেগমের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি রাশেদা আপার দেওয়া গীত প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হবে। মোবাইলে দেখেই আমরা আপার কাছে এসে বলি তোমার গীত শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে ঠাঁই পেয়েছে। পরে তাকে দেখানোর পর তিনি বিশ্বাস করেন। আমরা বেশ অবাক হয়েছি এই গীত দেখার পর’।
মন্তব্য করুন