সালটা ২০০৫। অনেক প্রতিযোগীকে টপকে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার নির্বাচিত হন শানারেই দেবী শানু। কিন্তু সেই অভিনেত্রীই এখন খ্যাতির পেছনে ছোটার দৌড় এড়িয়ে চলেন। বিনোদন-অঙ্গনের প্রতিযোগিতা তাকে এখন আর খুব একটা টানে না। খরগোশ-কাছিমের দৌড়ে নিজেকে কাছিমের দলে ভিড়িয়েছেন তিনি। একজন লাক্স তারকা হিসেবে যতটা আলো ছড়ানোর কথা ছিল, ততটা কিরণ কি দিতে পেরেছেন শানু? এসব নিয়েই কালবেলার সঙ্গে আলাপ হয় তার। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। মুঠোফোনের এপাশে বৃষ্টি ও শানুর হাসির শব্দ মিলেমিশে একাকার।
এই যে বেছে বেছে কাজ করা, ক্যামেরার সামনে আসতে শানুর এমন পরিমিতি বোধ, এর কারণ কী? প্রশ্ন শুনে কী যেন কী ভেবে এই অভিনেত্রী বললেন, ‘এটাকে নিজের বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে, অথবা ব্যর্থতা। আমি তো আমার মতো— এটাও একটা কারণ হতে পারে। দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় সবাই শামিল হচ্ছে, সেখানে আমি আমার মতো করে এগোচ্ছি; একটু একটু করে।’
কিন্তু একজন লাক্স তারকার কি পারতেন না বিনোদনপাড়ায় নিজের শেকড়টাকে আরেকটু বেশি জায়গায় বিস্তৃত করতে? শানুর উত্তর, ‘এই মানদণ্ড থেকে আমি কিছুটা পেছানো। এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতিযোগিতায় শুরু থেকেই আমি জড়াইনি। হয়তো সেই দৌড়ে অংশগ্রহণের মানুষটিই আমি নই। হ্যাঁ, নাচ, গান অভিনয়—এসব নিয়ে থেকেছি। কিন্তু তারকা হওয়ার যুদ্ধে আমি নামিনি। হয়তো সেই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার যোগ্যই আমি নই। আবার এমনও হতে পারে আমি সঠিকভাবে কাজে লাগিনি। এটা আমারই ব্যর্থতা।’
বিনয় দেখিয়ে নিজেকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চাইলেও তার অভিনীত ‘জবা’ নাটকটি বলছে ভিন্ন কথা। তাতে বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হচ্ছেন শানু। তাতে ‘লুবনা জামান’ নামে একটি নেতিবাচক চরিত্রকে এমনভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন যে দর্শকরা চরিত্রটির ওপর রীতিমতো বিষিয়ে উঠেছেন! শানুর ভাষ্য, ‘চরিত্রটি দর্শকদের কাছে একদমই দুচোখের বিষ হয়ে যাচ্ছে’। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকের প্রতিক্রিয়া যাচাই করে এ কথা বলেছেন শানু।
দীপ্ত টিভিতে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক ‘জবা’। নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করায় ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে শানুকে। বললেন, ‘এমন অভিজ্ঞতাকে প্রতিদিনই অন্যরকমভাবে রিসিভ করছি আমি। নাটকের গল্প অনুযায়ী ওই নেতিবাচক চরিত্রটি হয়তো এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, যা দর্শক মনে দাগ কাটছে।’
বড়পর্দায়ও দেখা গেছে শানুকে। তার অভিনীত একমাত্র সিনেমা ‘মিস্টার বাংলাদেশ’। তবে অভিনয়ের বাইরে আরও কিছু পরিচয় আছে শানারেই দেবী শানুর। তিনি একাধারে ভয়েজ আর্টিস্ট ও নৃত্যশিল্পী। এ ছাড়াও তিনি কবি ও লেখক। ২০১৭ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘নীল ফড়িং কাব্য’। তা ছাড়া ‘ভালোবাসার এপার ওপার’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ এবং ‘লিপস্টিক’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। আগামী বইমেলাতেও শানুর একটি কাব্যগ্রন্থ আসার কথা। এ কারণেই নিজের ব্যস্ততার বিষয়ে শানুর উত্তর, ‘বিভিন্ন মাত্রায় আমি কাজ করছি। যে কারণে আমার ব্যস্ততাগুলো বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা।’
আরও বললেন, “যেটুকু সময় পাই, সব কিছু বাদ দিয়ে হলেও লেখার প্রস্তুতি নিই। বছরজুড়ে আমি লেখার মধ্যে থাকার চেষ্টাই করি। এবার কবিতা লিখছি। আগামী বইমেলায় ‘অলৌকিক শব্দের ঘ্রাণ’ নামে কবিতার বই আসবে। কবিতার পাণ্ডুলিপি গোছাচ্ছি। এ ছাড়াও একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেছি। সেটার কাজ প্রতিদিনই একটু একটু করে এগোচ্ছে।”
এভাবেই কাটছে শানুর দিন। তার ভাষায়, ‘দিন তো আসলে প্রতি মুহূর্তেই কেটে যাচ্ছে’। অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে ঠিক কেমন চরিত্রে দেখতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি একজন অভিনয়শিল্পী হলেন কাদামাটির মতো, যে কোনো সাঁচেই তিনি জুতসই।’
মন্তব্য করুন