হালের জনপ্রিয় নায়ক নিরব হোসেন। এবার তিনি জুটি বেঁধেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে। ‘স্পর্শ’ সিনেমায় দেখা যাবে তাদের। যৌথ প্রযোজনার ছবি এটি। বাংলাদেশি অনন্য মামুন এবং কলকাতা থেকে অভিনন্দন দত্ত সিনেমাটি পরিচালনা করবেন।
স্পর্শ সিনেমার আদ্যোপান্ত নিয়ে চিত্রনায়ক নিরবের সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। এ সময় ছবিটির শুটিং, নায়িকা ও নিরবের ব্যক্তিজীবনের নানা ফিরিস্তি উঠে আসে। সিনেমাটির প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়ে নিরব বলেন, ‘মামুন ভাইয়ের সঙ্গে এর আগে আমার দুটি কাজ করা হয়েছে। তাই মামুন ভাই যখন আমাকে স্পর্শ সিনেমাটি করার কথা বলেন, তখন আমি রাজি হই। এরপর মামুন ভাই আমাকে ছবিটির গল্প শোনান। সেটি আমার কাছে আউটস্ট্যান্ডিং লেগেছে। যখন শুনলাম এখানে ঋতুপর্ণা অভিনয় করবেন, আমি চোখ বন্ধ করে সিনেমাটি করতে রাজি হয়ে যাই।’
সিনেমার দৃশ্যায়নের বিষয়ে এ চিত্রনায়ক বলেন, ‘কলকাতায় শুটিং করেছি। তারপর নিয়ম মেনে বাংলাদেশেও শুটিং শেষ করলাম। আরও কয়েক দিনের শুটিং বাকি আছে, সেটা শিগগিরই আমরা শুরু করব।’
ঋতুপর্ণার অভিনয় দক্ষতার বেশ প্রশংসা করে তিনি বললেন, ‘প্রথম দিন শুটিং শুরু হয় ঋতুপর্ণাকে দিয়েই। তখন মামুন ভাই আমাকে ডেকে মনিটরের সামনে বসার অনুরোধ করলেন। ঋতুপর্ণার অভিনয়, ডায়ালগ—এগুলো দেখতে বললেন। আমি মনিটরে সিনগুলো দেখছিলাম। তাতে তো কোনো ডায়ালগ বোঝা যায় না। কিন্তু ঋতুপর্ণার এক্সপ্রেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি কী বলতে চাইছেন। একজন আর্টিস্ট কতটা পরিপক্ব হলে, কতটা ক্যাপেবল হলে, শুধু তার চোখ দেখে, ঠোঁট নাড়ানো দেখে বোঝা যায় সে কী বলছে! তার অভিনয় ছিল আউটস্ট্যাডিং। আমার কাছে মনে হচ্ছিল, এত ভালো একজন সহঅভিনেত্রী পেলে নিজের অভিনয়ও ভালো হয়। এটা আমার জন্য অনেক পজিটিভ। সুন্দর একটি গল্পের সুন্দর ছবিতে কাজ করছি।’
সমালোচক মহলে নায়িকা হিসেবে ঋতুপর্ণার বয়স নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তবে ওসব আমলে নিলেন না অভিনেতা নিরব। বললেন, ‘নায়িকার বয়স কোনো বিষয় নয়। সিনেমায় অনেক ধরনের চরিত্র থাকে। নানা বয়সের কাজ থাকে। আমাদের এ গল্পের যে ইন্দিরা চরিত্র, সেখানে ঋতুপর্ণাকে প্রয়োজন ছিল বলেই তাকে নেওয়া হয়েছে। কেন ১৮ বা ২০ বছর বয়সী কোনো নায়িকা নেওয়া হলো না, সেটার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ আছে। কারণ না খুঁজেই অনেকে অনেক কথা বলে ফেলেন।’
নিরবের ভাষ্য, এ ছবির বিষয়ে মানুষ বেশ আগ্রহী। সিনেমাটি কবে মুক্তি পাবে—অনেকের মুখ থেকেই এ প্রশ্ন শুনেছেন তিনি।
মডেলিং থেকে অভিনয়, নিজের ক্যারিয়ারের পাওয়া না পাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষ স্ট্রাগল করছেন। আমাদের সিনেমাকে ভালোবেসে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার জন্যই এ স্ট্রাগল। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষ যেই অবস্থানে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখে, সেই অবস্থান যদি পেয়ে যায়, তখন মানুষ আর বেঁচে থাকতে পারবে না। একজন মানুষের জীবনে যদি কোনো পিছুটান না থাকে, জীবনে যদি কোনো অপূর্ণতা না থাকে, সেই মানুষটা হয়তো আত্মহত্যা করবে।’
অপূর্ণতাই যেন নিরবের কাম্য। তাই তো নিজের কথার মাঝখানে বললেন, ‘আমি চাই আমার অপূর্ণতাটা থাকুক। দিন দিন নিজেকে আরও বেশি ইম্প্রুভ করব। সিনেমায় অনেক কষ্ট করতে হয়, আরও অনেক বছর কষ্ট করতে হবে। সেই কষ্টটা আমি করতে চাই।’
নিজের মডেলিং ক্যারিয়ারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন মডেলিং করেছি তখন শুধু মডেলিংটাই করেছি। আমার মনে হয় মডেলিংয়ের জায়গায় আমার মতো সাকসেসফুল হওয়াটা অনেকের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন অনেকেরই পূর্ণ হয়নি, কিন্তু আমার হয়েছে। মডেলিংয়ের জায়গায় আমি শতভাগ সাকসেসফুল।’
তিনি আরও বলেন, ‘হিন্দি সিনেমা যেগুলো রিলিজ হয়েছে, আমার কাছে মনে হয় পজিটিভ কোনো কিছু আসেনি। পজিটিভ কোনো জায়গাও তৈরি করতে পারেনি। যারা বাংলা চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে তারা বাংলাদেশে বাংলা চলচ্চিত্রই দেখতে চায়। গুটিকয়েক মানুষ সময় কাটানোর জন্য হয়তো সেই সিনেমাগুলো দেখেন। কিন্তু ভালোবাসার জায়গা কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্র। যতই অন্য দেশের ছবি আসুক, আমাদের সিনেমাই ভালোবাসে মানুষ।’
চলতি মাসেই বাংলাদেশের প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী। তার বিষয়ে নিরব বলেন—‘আমরা যারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে আছি বা যারা সিনেমা ভালোবাসে, তারা প্রত্যেকেই সালমান শাহকে ভালোবাসে। এখনো মনে হয় না যে তিনি অনেক দিন আগে মারা গেছেন। মনে হয় মাত্র কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার স্টাইল, কথাবার্তা, অভিনয়, তার অল্প কিছু সিনেমা, সেগুলোকে মানুষ এখনো ভালোবাসে। আমার কাছে মনে হয়, সালমান শাহ আরও কয়েকশ বছর বাংলা চলচ্চিত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন। তিনি এখনো আমাদের অনুপ্রেরণা।’
মন্তব্য করুন