কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৬ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাতের আঁধারে নায়িকা ববির রেস্টুরেন্ট দখল, মামলা দায়ের (ভিডিও)

রাতের আঁধারে নায়িকা ববির রেস্টুরেন্ট দখল, মামলা দায়ের
রাতের আঁধারে নায়িকা ববির রেস্টুরেন্ট দখল, মামলা দায়ের। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশানে চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববির রেস্টুরেন্ট ‘ববস্টার ডাইনিং’ দখল, লুটপাট, প্রতারণা, ব্যবসায়ীক অংশীদারকে হত্যাচেষ্টা ও মারপিট এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১ জুলাই) রেডওয়ার্কিড রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে ববি এসব অভিযোগ করেছেন।

গত ২২ জুন দিবাগত রাতে ববস্টার ডাইনিংয়ে লুটপাট ও মালামাল সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ২৩ জুন দুপুরে ববির ব্যবসায়ীক অংশীদার ঘটনাস্থলে গেলে তাকে মারপিট করা হয়।

এ বিষয়ে ওইদিনই মামলা দায়ের করেন ব্যবসায়ীক অংশীদার মির্জা বাশারের ছোট ভাই আব্বাস। একই দিন মির্জা বাশার ও ববিকে আসামি করে রেস্টুরেন্ট ভবনের এ জি এম সাকিব মিথ্যা মামলা দায়ের করেন বলে দাবি করেছেন ববি।

সংবাদ সম্মেলনে ববি বলেন, সৎভাবে জীবনযাবন অব্যাহত রেখে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় আমি গুলশান-২ এর ১১৩ নম্বর রোডের ওয়াই এন সেন্টারের একটি রেস্টুরেন্ট ক্রয় করি। রেস্টুরেন্টে অপারেশন পার্টনার হিসেবে রয়েছেন ববির পূর্বপরিচিত মির্জা বাশার। আগের রেস্টুরেন্টের মালিক আমানের সঙ্গে তার রেস্টুরেন্টের সমুদয় আসবাবপত্র (ইন্টেরিয়র ও অন্যান্য) ৫৫ লাখ টাকা মূল্য ধরে একটি চুক্তি হয়।

একই সময়ে রেস্টুরেন্ট ভবনের (বিল্ডিং) মালিকের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন ও ছেলে জাওয়াদ আল মামুনের সঙ্গে ভবন রেস্টুরেন্ট মালিকসহ আলোচনা করি। তখন শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ রেস্টুরেন্টটি আমাকে ভাড়া নিতে উৎসাহিত করেন এবং চলমান রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করলে তারা পরবর্তী সময়ে আমাদের নামে নতুন চুক্তিপত্র করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

তাদের প্রতিশ্রুতির পর আমরা আমানকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করি এবং টাকা পাওয়ার পর দিন আমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তাকে দুটি চেকও প্রদান করা হয়।

তিনি বলেন, গত এপ্রিল মাসে আমান আমাদের কাছে রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করেন। আমরা এপ্রিল থেকে রেস্টুরেন্টের ভাড়া প্রতি মাসে আড়াই লাখ ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধ করছি। ভবনের মালিক আমাদের নামে ভাড়া জমা নিয়ে রসিদও দেন। রেস্টুরেন্টে ওঠার পর আমরা ডেকোরেশন পরিবর্তনের কাজ শুরু করি।

যাতে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। ডেকোরেশনে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ পর্যায়ে আমরা রেস্টুরেন্ট পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করি এবং ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আমরা ভবনের শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ আল মামুনকে চুক্তিপত্র, ফায়ার সেফটি ও বাণিজ্যিক অনুমতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়ার অনুরোধ করি।

তিনি অভিযোগ করেন, আমরা যখন ট্রেড লাইসেন্স করতে এসব কাগজপত্র চেয়েছি তখন থেকে হঠাৎ করেই পূর্বের রেস্টুরেন্ট মালিক আমান, ভবন মালিক শাহিনা ইয়াসমিন, তার ছেলে জাওয়াদ, ভবনের দায়িত্বে থাকা জয়, সাকিবসহ অন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাদের হয়রানি শুরু করেন। প্রথমে আমান তাকে পরিশোধ করা ১৫ লাখ টাকার বিষয় অস্বীকার করেন। যদিও তিনি ১৫ লাখ টাকা ক্যাশ বুঝে নিয়ে চাবি হস্তান্তর করেন।

অন্যদিকে শাহিনা ও জাওয়াদের নির্দেশে ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী জয়, সাকিব, হারুন ও তাদের সহযোগীরা বারবার আমার রেস্টুরেন্টের বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে আমাকে হয়রানি শুরু করেন। এর মধ্যে ওয়ান গ্রুপ থেকে বারবার সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।

গুলশানের মতো জায়গায় এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে দেখে আমি ভীত হয়ে যাই এবং এরা আসলে কাদের লোক তা জানার চেষ্টা করি। তখনই আমরা প্রথম জানতে পারি, শাহিনা ইয়াসমিন সাবেক এক প্রভাবশালী পিএনপি নেতার স্ত্রী এবং এই ভবনের মালিক তিনিই।

এমন পরিস্থিতিতে বিপদের আশঙ্কা দেখে ট্রেড লাইসেন্সের বিষয়ে করণীয় কী সে পরামর্শ করতে আমরা সিটি করপোরেশনে যাই এবং জানতে পারি, ওই বিল্ডিংয়ের কোনোরকম বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি নেই। এ জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেইলি রোডে রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার পর এই বিল্ডিংটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে শাহিনা ইয়াসমিন তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সরিয়ে ফেলার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিল্ডিং খোলেন—যোগ করেন ববি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর আমরা বুঝতে পারি, আমান, শাহিনা ও জাওয়াদ মিলে আমাদের সঙ্গে এক ভয়াবহ প্রতারণা করেছেন। তারা অবৈধ রেস্টুরেন্ট বাঁচাতে না পারার ভয়ে বিক্রি করে টাকা তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতেন। সেই ফাঁদে আমাদের ফেলা হয়েছে। বাণিজ্যিক কোনো অনুমতি না থাকার পরও মাত্র তিন মাসের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসে আমাদের প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করিয়েছেন এবং তারা আমাদের থেকে ভাড়াও নিচ্ছেন।

তারা ধারণা করেছিল, আমরা বৈধ কোনো কাগজপত্র চাইব না। সিলগালা হওয়া ভবনটিতে এখনো আগের মতোই সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে পার্কিংয়ের স্থানে (গ্রাউন্ড ফ্লোর) ‘ল্যাভেন্ডার’, ‘বাসমতি’ নামের দুটি বাণিজ্যিক শপসহ ৩টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চলছে। প্রথম তলায় ‘থাই সিগনেচার’ নামে রেস্টুরেন্ট, দ্বিতীয় তলায় ‘হালদা ভ্যালি’ নামে রেস্টুরেন্ট ও চতুর্থ তলায় ‘স্পা সেলুন’ চলছে।

ভবনের বৈধ কাগজপত্র চাওয়ায় তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আমাদের হুমকি দিতে থাকে, এই ভবনে তোমাদের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ গত ২২ জুন রাত ১১টায় আমরা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে বেরিয়ে যাই। পরদিন ২৩ তারিখ সকালে রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা গেলে নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্যরা তাদের ঢুকতে বাধা দেয়। কেন ঢোকা যাবে না তার কোনো উত্তর দিতে পারে না। খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মির্জা বাশার সেখানে গেলে হঠাৎ করেই ১৫-২০ জনের সন্ত্রাসী দল তার ওপর আক্রমণ শুরু করে।

সেখানে বাশারকে একা পেয়ে বেদম মারধর ও হত্যাচেষ্টা করা হয়। যার সিসিটিভি ভিডিও রয়েছে। আমি বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ থানায় অব্যহিত করি এবং সেখানে পুলিশ ও আমি একই সঙ্গে পৌঁছাই। পুলিশের উপস্থিতিতে আমরা রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গেলে দেখতে পাই সেখানে নতুন তালা লাগানো হয়েছে।

মারধর করে উল্টো তাদের নামেই মামলা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ববি বলেন, আমরা গুলশান থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা থেকে মির্জা বাশারকে আগে চিকিৎসা করিয়ে এসে পরে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে আমরা মামলা করতে গিয়ে জানতে পারি তারা আগেই মামলার অভিযোগ জমা দিয়েছে। যেখানে আমাকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে আমি পুলিশের সঙ্গে যাই এবং পুলিশের সঙ্গে বের হয়ে প্রথমে থানায় যাই। মামলায় তদন্ত হচ্ছে, আশা করি তদন্তে সত্যতা উঠে আসবে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমি দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রে কাজ করছি। শিল্পী হিসেবে আমার একটা সম্মান ও সুনাম আছে। আমি কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়াই না। বৈধভাবে একটা ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

সম্পূর্ণ অবৈধ একটি ভবনের বিষয়ে আমার কাছে তথ্য গোপন করে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। শাহিনা ইয়াসমিনের ওপর আমি সরল বিশ্বাসে ভরসা করি। কিন্তু তিনি, তার ছেলে ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর এমন তৎপরতার আমি প্রতিকার চাই। আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা সিটি করপোরেশনকে জিজ্ঞেস করুন, কীভাবে এই ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। যদি তারা সময়মতো আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিত তাহলে আজ আমি প্রতারিত হতাম না।

নিজের অর্থ খরচ করে ব্যবসা করতে নেমে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন দাবি করে চিত্রনায়িকা ববি বলেন, আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর এখনো গুলশানের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কীভাবে এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলে তা আমার বোধগম্য নয়। তাদের কারা সহায়তা করে তাও অনুসন্ধান করা দরকার।

শাহিনা ইয়াসমিন এতটাই বেপরোয়া হয়ে গেছেন, আমরা যখন বৈধ কাগজপত্র চেয়েছি তখন তিনি বর্তমান সরকার এবং সরকারপ্রধান নিয়েও উল্টাপাল্টা ও অশ্লীল মন্তব্য করেছেন বলে ববির অভিযোগ।

এ ছাড়া ববি অভিযোগ করেন, তিনি জানতে পেরেছেন, প্রশাসনের দুজন লোক শাহিনা ও জাওয়াদের এসব অপকর্মে গোপনে সহায়তা করেন এবং তাদের সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। এসব বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ওই দিন একটা ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষ দুটি মামলা করেছে। মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলের নতুন আদেশ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জকে জয় করতে চাই : পলক 

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বেতন ৪০ হাজার

পিতৃত্বকালীন ছুটির নির্দেশনা চেয়ে ৬ মাসের শিশুর হাইকোর্টে রিট

সেরাটা দিতে না পারার আক্ষেপ সেলেসাওদের

এজলাস উদ্বোধন করলেন ঢাকা জেলা প্রশাসক

রহস্যজনকভাবে উধাও ৩১ হাজারের বেশি নারী

ঢাকায় সাউথ ইস্ট এশিয়া রেগুলেটরি নেটওয়ার্কের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো প্লাস্টিনেশন ল্যাবরেটরি

জীবিত থাকা অবস্থায় চল্লিশার আয়োজন করলেন মারফত

১০

বেজবাবা সুমনের সফল অস্ত্রোপচার

১১

অষ্টম শ্রেণি পাসে সুপ্রিম কোর্টে চাকরির সুযোগ

১২

টাঙ্গাইলে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে নারীসহ নিহত ২, আহত ১০

১৩

দাবি মানলেই ক্লাসে ফিরবেন ঢাবি শিক্ষকরা 

১৪

দুই পুলিশ কর্মকর্তার ২১ বছরের জেল

১৫

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘জাতীয় কৌতুক’ : রিজভী

১৬

উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ কঠিন হবে, বললেন ব্রাজিলের কোচ

১৭

সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বেড়েই চলছে

১৮

এমপি আনার হত্যা : স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন ফয়সাল

১৯

ঘুমকাণ্ডের ব্যাখ্যায় তাসকিনের ফেসবুক পোস্ট

২০
X