দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান পবন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) আব্দুছ সালামের সই করা চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন গতকাল (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ফোন করে অকথ্য, আপত্তিকর ও অশোভন বক্তব্য দিয়েছেন। একইসঙ্গে রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে ৩ দিনের মধ্যে বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই প্রার্থী এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান লঙ্ঘন করেছেন। ফলে বিধান অনুযায়ী হাবিবের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আগামী ০১ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে (কক্ষ নম্বর-৩১৪, নির্বাচন ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা) অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গতকাল শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরাবর স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক সুপারিশ পত্রে বলা হয়, নির্বাচন কার্যক্রম শুরু থেকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান পবনের আচরণের বিষয়ে সময়ে সময়ে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়। কিন্তু এ স্বতন্ত্র প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারকে হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি প্রদানের ঘটনায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদের মধ্যে ভয়-ভীতি ও শঙ্কা কাজ করছে।
নির্বাচন কমিশকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ পত্রে বলা হয়, ১৯৭২-এর ৮৪ক অনুচ্ছেদ অনুসারে লক্ষ্মীপুর-১ সংসদীয় আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন (প্রতীক-ঈগল) অপরাধ করেছেন। তার অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখাসহ মাঠপর্যায়ে নির্বাচনের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের মনোবল অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনের নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ইসি বরাবর জানিয়ে জেলা প্রশাসক পক্ষ থেকে বলা হয়, চলমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র্যাব, আনসার, কোস্টগার্ডসহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সবার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। প্রার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিতে নির্বাচনী এলাকায় জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহল চলমান রয়েছে।
ইসি বরাবর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী তার বক্তব্যে রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে তিন দিনের মধ্যে বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে মন্তব্য করেন ও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনার সব কথা রেকর্ড হচ্ছে। আমি বুঝে গেছি আপনারা থাকলে আমি নির্বাচন করতে পারব না। আপনি যা যা বলেছেন কিছুই করেননি। আমি (স্বতন্ত্র প্রার্থী) আপনাকে (২৮ ডিসেম্বর) ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। দৃশ্যমান কিছুই করেন নাই, কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। কোনো অভিযোগ দিলে আপনি পাঠান এসপির কাছে, এসপি পাঠায় আপনার কাছে। এসপি আমাকে আইন দেখায়। আপনি আর এসপি এখানে কীভাবে কাজ করেন তা আমি দেখে নিব। আপনি আর এসপি আগামী তিন দিনের মধ্যে এর ফলাফল জানতে পারবেন। আপনারা জানেন না আমি কোথায় যেতে পারি। আগামীকাল নির্বাচন কমিশনে যাবো, আপনারা কীভাবে এখানে থাকেন তা আমি দেখবো।’ প্রায় ৪ মিনিট বক্তব্য প্রদানকালে জেলা প্রাশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন হুমকি দিতে শোনা যায়।
মন্তব্য করুন