নিজের মনের হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, অভিমানসহ সব কুপ্রবৃত্তি দমন করার জন্য পবিত্র ও হালাল পশু তার নামে জবাই করার নাম কোরবানি। ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে কোরবানির তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। কোরবানির পশুর যত্ন নিয়ে লিখেছেন রাসেল আদিত্য
ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা পবিত্র ঈদুল আজহাকে বাংলাদেশে বলা হয় ‘কোরবানির ঈদ’। কোরবানির পশুকে কোনো ধরনের কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। পশুর প্রতি সদয় ও দয়াবান হয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালন করা এবং কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই কাজটা করছি তা মনেপ্রাণে দৃঢ় রাখা জরুরি বিষয়। সবাই সাধ্যের মধ্যে প্রতিবছর গরু, মহিষ ও ছাগল কেনেন। এখন হাটে উট, দুম্বাও বিক্রি হয়। কিন্তু যে পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া হোক না কেন, কোরবানির আগের দিনগুলোতে পশুটির যত্ন নিতে হবে। কোরবানির পশু আগেভাগে কেনা ভালো। এতে কোরবানির পশুর যত্ন ও পরিচর্যা নেওয়া যায়। পশুটির যত্ন যেভাবে নেবেন : ১. কোরবানির হাট থেকে পশু কিনে দৌড়ে বাড়িতে নেওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ এসব পশুর দৌড়ানোর অভ্যাস থাকে না। এতে গরু বা ছাগলটি ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। হাট থেকে বাড়ির কাছে হলে হেঁটে নেওয়া যায়; কিন্তু হাট থেকে বাড়ি বেশি দূরে হলে পিকআপভ্যানে করে পশু নেওয়া ভালো।
২. পশু কেনার পর হাট থেকে শুরু করে কোরবানি দেওয়া পর্যন্ত পশুর যত্ন নেওয়ার বিষয়ে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। এতে আপনার কোরবানির পশুটি সুস্থ থাকবে।
৩. কোরবানির হাটগুলোতে ব্যবসায়ীরা পশুকে পর্যাপ্ত খাদ্য দেয় না। সে কারণে পশু কিছুটা দুর্বল থাকে। হাট থেকে গরু, মহিষ কিংবা ছাগল কেনার পর যত দ্রুত সম্ভব গোসল করানো উচিত। এ ছাড়া বেশি করে পানি খাওয়ানো দরকার।
৪. পশুর শরীরে কোনো ধরনের ময়লা থাকলে বাড়িতে এনে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। পশু কেনার পর জবাইয়ের আগ পর্যন্ত পশুটিকে পরিষ্কার স্থানে এবং স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখা যাবে না।
৫. কোরবানির পশুকে জোর করে বেশি খাবার খাওয়ানো ঠিক নয়। পশুর সামনে স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। আবহাওয়া গরম থাকলে পানির সঙ্গে স্যালাইন মেশানো যেতে পারে। তবে কোরবানির আগের রাতে বেশি খাবার দেওয়া উচিত নয়।
৬. রাসায়নিক খাবার না দিয়ে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া। ভুসি, খৈল, গাছের পাতা, ঘাস ও খড় আগে থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্তুত রাখা দরকার। যাতে কোরবানির পশু ক্ষুধার্ত না থাকে।
৭. প্রতিদিন পশুর মলমূত্র ও উচ্ছিষ্ট খাবার পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পরিবেশ যেন দূষিত না হয়।
৮. কোরবানির দিন ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে পশুকে গোসল করিয়ে অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে হালকা রোদের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে গোসল করানোর পানি পশুর শরীর থেকে আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। এতে পশুর গায়ে লেগে থাকা ময়লা-গোবর ইত্যাদি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৯. জবাই করার জন্য পশু শোয়ানোর সময় খুব বেশি ধস্তাধস্তি না করাই ভালো। কৌশল অবলম্বন করে যত্নের সঙ্গে শুইয়ে দেরি না করে দ্রুত জবাই করা উত্তম। এক পশুর সামনে অন্য পশুকে জবাই না করা উচিত। এতে জীবিত পশুর মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি হবে না। আর পশু কষ্টও পাবে না।
১০. অনেকেই পশু জবাইয়ের পরপরই চামড়া ছাড়ানো কিংবা পায়ের রগ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটি মোটেও ঠিক নয় বরং জবাইয়ের পর পশু পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে পড়লে কিংবা মৃত্যু নিশ্চিত হলেই কেবল পশুর চামড়া ছাড়াতে হবে। তাড়াহুড়া করে চামড়া ছাড়ানো নিষ্ঠুরতা, যা কোনোভাবেই উচিত নয়।
১১. কোরবানি পশু কোনো কারণে অসুস্থ হলে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের সাহায্য নিতে পারেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় টোল ফ্রি হটলাইন নম্বর ১৬৩৫৮। মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বা ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ রাখতে পারেন আপনার কোরবানির পশু। কোরবানির পশুর যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে কোরবানিদাতার সঙ্গে কোরবানির পশুর একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। কোরবানির পশুর প্রতি কোরবানিদাতার ভালোবাসা ও মায়া জন্ম নেয়। কোরবানির পশুর প্রতি মায়া ও মমত্ববোধ সৃষ্টি করা একান্ত দায়িত্ব। অন্তর থেকে পশুটিকে মায়া করলেই সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব।
সর্বোপরি কোরবানি পশু কেনা থেকে শুরু করে জবাই পর্যন্ত কোনোভাবেই এ পশুকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। পশুর প্রতি সদয় ও দয়াবান হওয়া ইমানের একান্ত দাবি।
মন্তব্য করুন