সুমাইয়া রফিক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০৯:১২ পিএম
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৩, ০৮:৩৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

খেতে পারবেন যতটুকু

মডেল: বারিশ হক; ছবি : রনি বাউল
মডেল: বারিশ হক; ছবি : রনি বাউল

ফিট থাকতে কে না চায়? তবে ফিট থাকার জন্য প্রয়োজন সঠিক ডায়েট মেনে চলা। কেননা সঠিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের চেহারায় প্রতিফলিত হয়। তাই সুস্থ শরীর পেতে রোজকার ডায়েটের দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার। জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ সুমাইয়া রফিক

একটা সময় অনেকেই মনে করতেন মডেল-অভিনেত্রী বা তারকাদের জন্যই শুধু ডায়েট প্রযোজ্য। সে ধারণা এখন পাল্টেছে। অধিকাংশরাই এখন সঠিক ডায়েটের দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকছেন। তবে শুধু হাতেগোনা কিছু মানুষের জন্য নয়, প্রতিটি মানুষের সঠিক ডায়েট মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে সুমাইয়া রফিক বলেন, প্রথমত সঠিক ডায়েট আমাদের যতটুকু পুষ্টি চাহিদা আছে তা পূরণ করবে। আমাদের এনার্জি ও নিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সি হবে না। দ্বিতীয়ত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে যেমন—উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল, হাই ও লো প্রেশার, সুগার লেভেল এবং হরমোনের ওঠানামা ঠিক করবে বা যাদের এ রোগগুলো আছে, সঠিক ডায়েট তা অনেকটাই কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। তা ছাড়া আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্যও সঠিক ডায়েট মেনে চলা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হতাশা, ক্লান্তি, উদ্বেগ এসব দূর করতে দারুণ ভূমিকা পালন করে ডায়েট।

জন্মের পর থেকেই ডায়েট মেনে চলতে হবে বলে জানিয়ে ডায়েটেশিয়ান সুমাইয়া বলেন, জন্মের পর থেকেই সবাইকে ডায়েট মেনে চলতে হবে। একজন শিশু যখন এই পৃথিবীতে আসে, তাকে ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো কিছু খাওয়ানো যাবে না কথাটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু দিনে কতবার একজন মা তার সন্তানকে দুধ খাওয়াবেন তা সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে। এতে করে শিশুর পূর্ণ বিকাশ হয় এবং শিশুটি সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে। প্রতিটি মানুষের নিউট্রিশনাল চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, তাই সেসব নিয়ম মেনেই সঠিক ডায়েট চার্ট অনুযায়ী চলতে হবে।

ডায়েটের শুধু উপকারিতা নয়, আছে কিছু অপকারিতাও। এ নিয়ে প্রুডেন্ট নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েট সেন্টারের এ চিফ ডায়েটেশিয়ান এবং ট্রেইনিং স্পেশালিস্ট বলেন, সঠিক ডায়েটের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো—বেশি দিন সুস্থ ও সুন্দর থাকা যায়। দুর্বলতা, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হার্ট, কিডনি, স্থূলতা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। অপকারিতা হিসেবে এটি ধরা হয়ে থাকে যে, ডায়েটের জন্য একটু বেশি সময় ও কষ্ট করতে হয়। কী খাব বা পরিবারের সদস্যদের কী খাওয়াব, হেলদি ডায়েট কীভাবে মেনে চলব। বাজেট এবং কম সময়ের মধ্যে এসব মেনে চলা একটু কঠিন হয়ে যায় অনেক সময়।

প্রযুক্তির এ সময়ে ইউটিউব ও গুগল দেখে অনেকেই ডায়েট করা শুরু করে দেয়। তবে এটি মোটেও ঠিক নয়। সুমাইয়া বলেন, ডায়েট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না নিয়ে শুরু করা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। ধরুন, আমরা যখন একটি জামা বানাতে দিই তখন নিজের মাপের দিই, যেন তা সঠিকভাবে ফিটিংস হয়। ঠিক একইভাবে প্রত্যেকের শরীরের ধরন ও চাহিদা আলাদা হয়ে থাকে আর সে অনুযায়ী তাদের ডায়েট হওয়া উচিত। অনলাইন দেখে ডায়েট ফলো করলে অনেক সময় নানা বিপদের কারণ হয়। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি তাহলে, যার ডায়াবেটিস আছে তিনি যদি কেটো ডায়েট ফলো করেন, তাহলে হাইপোগ্লেসেমিক হয়ে স্ট্রোক করতে পারেন। তাই ডায়েটের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে অবশ্যই। এ বিষয়ে কোনো পেশাদার নিউট্রিশনিস্ট বা ডায়েশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তারা সব বিষয় খেয়াল রেখে ডায়েট প্ল্যানটা তৈরি করে। ডায়েট প্ল্যান একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এ ছাড়া যিনি ডায়েট প্ল্যান দিচ্ছেন তাকে অবশ্যই এ বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান এবং দক্ষ হতে হবে।

এদিকে কোরবানি ঈদ মানেই মাংসের নানা পদের সমারোহ থাকে চারদিকে। সঙ্গে পোলাও এবং বিভিন্ন মিষ্টান্ন তো থাকেই। তবে খাবার দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়লে চলবে না। মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন সুমাইয়া রফিক। তিনি বলেন, একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ ৭৫ থেকে ১০০ গ্রাম মাংস খেতে পারে। টুকরোর হিসাব করলে তিন-চারটি। গরুর ঘাড় এবং রানের মাংসে সবচেয়ে কম ফ্যাট থাকে, তাই এ অংশ বাদে অন্যান্য অংশের মাংস রান্নার আগে ভালোভাবে চর্বি ছেটে নিতে হবে। গরুর মাংস খাওয়ার পর তা হজম হতে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে, তাই অতিরিক্ত মাংস খেলে ইনডাইজেশন, অ্যাসিড রেফ্লাক্স এবং জিআইজি ইনফ্লামেশন হতে পারে। তাই হজমের জন্য গরুর মাংসের সঙ্গে বেশি বেশি সবজি খেতে হবে। ইসপগুলের ভুসি, চিয়া সিডস ও তোকমা দানা ডায়েটে রাখা যেতে পারে। যাদের কোলেস্টেরল ও হাইপ্রেশার আছে তাদের কোনোভাবেই দিনে ৫০ গ্রামের বেশি গরুর মাংস খাওয়া উচিত নয়। যাদের কিডনি সমস্যা আছে তারা ছোট এক টুকরোর বেশি কোনোভাবেই খেতে পারবেন না। খেয়াল রাখতে হবে, সুস্থ ব্যক্তিও অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে ইউরিক অ্যাসিড লেভেল বেড়ে যেতে পারে এবং বাতের ব্যথা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদেরও এ গরমে গরুর মাংস না দেওয়াই ভালো। তবে দিনে একবেলা দেওয়া যেতে পারে।

ঈদের রান্নায় নানারকম মসলার ব্যবহার অন্যান্য সময়ের তুলনায় একটু বেশিই হয়ে থাকে। এ গরমে মসলা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে এ নিউট্রিশনিস্ট বলেন, গুঁড়া মসলা না খেয়ে দই, কাটা মসলা, কাঁচামরিচ, ক্যাপসিকাম, টমেটো, রসুন দিয়ে রান্না করলে ভালো। সুস্থ থাকার জন্য খাবারে অতিরিক্ত লবণ, চিনি, তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোরবানির সময় মাংস খাওয়া হবে তাই আগে থেকেই হালকা-পাতলা খাওয়া শুরু করা ভালো। তাহলে ভালোভাবে কোরবানি ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। বেশি বেশি পানি, লেবুপানি, আদা বা দারচিনি দিয়ে ফুটানো পানি খেলে তা পেটের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এ ছাড়া কোরবানির পরপরই মাংস রান্না না করে চার-পাঁচ ঘণ্টা পর রান্না করলে তা হজমের জন্য ভালো। ফ্রিজে দুই-তিন মাসের বেশি কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করা যাবে না। যদি মাংস থেকে কোনো কারণে গন্ধ আসে তাহলে তা রান্না না করাই ভালো।

লেখক : পুষ্টিবিদ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জনবল নেবে মধুমতি ব্যাংক, ৩৫ বছরেও আবেদন

রাজশাহীতে গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিহত 

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

দেশে ফিরলেন আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া ১৪ বাংলাদেশি

আজকের নামাজের সময়সূচি

শহীদ আমিনুলের সন্তানদের দায়িত্ব নিল ইত্তেফাকুল উলামা

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

১০

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

১১

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

১২

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

১৩

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

১৪

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

১৫

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১৬

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১৭

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১৮

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১৯

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

২০
X