ঈদে বড়দের তুলনায় ছোটরাই বেশি উদযাপন করে। তবে অধিক গরমে তারা কোনো পোশাকই পরতে চায় না। ছোটাছুটি করার কারণে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে যায়। দৌড়ঝাঁপ কমানোর থেকে আরামদায়ক সুতি কাপড় বেছে নেওয়াই ভালো। ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন— রাজীব শাঁখারী
এখন মৌসুম কোরবানি ঈদের। সঙ্গে চলছে গ্রীষ্মের বিচ্ছিরি রকমের তাপপ্রবাহ। অসহ্য এ গরমে নাকাল সমগ্র প্রাণিকুল। প্রতিদিনই তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভাঙছে। এমন পরিস্থিতিতে বড়দের চেয়ে বেশি দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে বাস করছে ছোটরা। তাই ছোটদের স্বাস্থ্য ক্ষতির শঙ্কাও অধিক। আর ঈদে বরাবরই বড়দের তুলনায় ছোটরাই বেশি উদযাপন করে। কিন্তু অধিক গরমে ছোটরা কোনো পোশাকই পরতে চায় না। আবার খালি গায়েও তাদের রাখা সম্ভব নয়। তাই অভিভাবকরাও বাচ্চাদের জন্য কী ধরনের পোশাক কিনবেন, সেই বিষয়ে অনেকটাই ঘোরের মধ্যে আছেন।
গরম এবং ঈদকে মাথায় রেখে বাচ্চাদের পোশাক নিয়ে বড়দের অনেক চিন্তা। আর বাবা-মায়ের সেই চিন্তা দূর করতে নিরলসভাবে দেশীয় পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা, ডিজাইনাররা বাচ্চাদের দেহবান্ধব নানান ধরনের পোশাকের জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। এ পোশাকগুলো যেমন আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই, তেমনি ফ্যাশনেবল। পোশাকের চাহিদা সমৃদ্ধ করতে দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গার্মেন্টসের তৈরি পোশাকও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এখন রাস্তায় বের হলে বা কোনো শপিং মলে গেলে অনেক দোকানই পাওয়া যাবে গার্মেন্টসের তৈরি এক্সপোর্ট কোয়ালিটির এসব পোশাক। এ পোশাকগুলোর দাম হাতের নাগালে এবং মানের দিক থেকেও বেশ ভালো আবার স্টাইলিশও বটে। শিশুদের পছন্দ কালারফুল রং আর স্টাইলিশ ড্রেস। তাই এবারের কোরবানির ঈদে শিশুদের জন্য উপযুক্ত পোশাকের বিষয়ে রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস জানান, ‘শিশুরা অত্যন্ত কোমল তাই তাদের পোশাক তৈরির সময় আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই সুতি, হাফসিল্ক, লিনেন ইত্যাদি নরম কাপড়ই বেশি ব্যবহার করে থাকি। আর পোশাক রঙিন করতে ব্যবহার করি প্রাকৃতিক রং। যা বাচ্চাদের শরীরে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই নিমিষে মানিয়ে যায়। বাচ্চারাও এ পোশাক পরে বেশ আরাম অনুভব করে।’
বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করার ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনা করাও জরুরি। কারণ বিভিন্ন বয়সী বাচ্চাদের পোশাকও বিভিন্ন রকম হয়। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এর ডিজাইনার ফারুক হেলাল জানান, বাচ্চাদের পোশাকে নকশার চেয়ে আরামদায়কতার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিউবর্ন বেবিদের জন্য পাতলা সুতি কাপড়ের নিমাই সেরা। আর ভয়েল ফেব্রিক সবচেয়ে ভালো। পোশাকে ফ্লোরাল প্রিন্ট করা যায় আবার সামান্য কিছু হাতের কাজের নকশাও থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পোশাকের ওভার ওয়ার্কের কারণে বাচ্চাদের দেহের কোনো ক্ষতি না হয়।
বয়স হিসেবে বাচ্চাদের জন্য মানানসই সঠিক পোশাক নির্বাচন করা প্রয়োজন। যেমন দুই থেকে দশ বছরের মেয়েদের ফ্রক বা টপসই ভালো মানায়। আর ছেলেদের জন্য শার্ট-প্যান্ট মানানসই। এ ছাড়া টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ফতুয়াও ছেলেদের জন্য খুবই আরামদায়ক। নানান বৈচিত্র্যময় প্যাটার্ন ও ডিজাইনে তৈরি এসব পোশাক বাচ্চাদের নজর কাড়তে বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের ব্যবহারে প্রিন্ট ও মোটিভ আনা হয়েছে। বাচ্চাদের জন্য নজরকাড়া পোশাকগুলো পাওয়া যাবে আড়ং, অঞ্জন’স, কে-ক্রাফট, দেশাল, নিপুণ, লারিভ, সারা, কিউরিয়াস, রঙ বাংলাদেশ, বাংলার মেলাসহ দেশি ব্র্যান্ড শোরুমে।
হাল সময়ে পাতলা নিট ফেব্রিকের পোশাকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো। গার্মেন্টসে তৈরি এক্সপোর্ট কোয়ালিটির এসব আরামদায়ক পোশাক প্রসঙ্গে গার্মেন্টস পোশাক ব্যবসায়ী ভিউপয়েন্টের স্বত্বাধিকারী আশিকুজ্জামান জানান, গার্মেন্টসে তৈরি এসব স্টক-লটের পোশাক আরামদায়ক, ফ্যাশনেবল এবং তুলনামূলকভাবে দামে সস্তা হওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মহামারি করোনা-পরবর্তী ভঙ্গুর বর্তমান অর্থনীতিতে সব মানুষের হাতে টাকা-কড়ির সংকট। আর ছোটরা এসব বিষয় তেমন একটা তোয়াক্কা করে না। ঈদ উদযাপনে নতুন পোশাক চাই-ই চাই, তারা কোনো বাধাই মানে না। তাই তাদের শখ মেটাতে সাধ্যমতো ঈদের কেনাকাটার পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য আরামদায়ক পোশাকের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। নিজের সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে এবং দুঃসহ গরমের কথা বিবেচনা করে উপযুক্ত পোশাক বাছাই করাই সমীচীন।
মন্তব্য করুন