অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা ছেলেটা আজ বিসিএস ক্যাডার। বেলায়েত হোসেন ইমরোজের বাবা পেশায় একজন গ্রাম্য চা দোকানি। ছোটবেলায় প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় সংসারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। দীর্ঘদিন দোকানি বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে যে ছেলেটার ভোর থেকে সন্ধ্যা কাটত, যার শৈশব-কৈশোরের অধিকাংশ পড়াশোনা বাবার দোকানে বসেই করতে হয়েছে, সেই ছেলেটাই গতকাল ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ও শিক্ষা ক্যাডারে মেধা তালিকায় দর্শন বিভাগে হয়েছেন দ্বিতীয়।
বেলায়েত হোসেন ইমরোজ শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার বিনোদপুরের শামসুল তালুকদারের সন্তান। মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে ইমরোজ ৩১ নম্বর পশ্চিম বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে প্রাথমিক বৃত্তিলাভ করেন। ২০১২ সালে বিনোদপুর মৌলভী কান্দি দাখিল মাদ্রাসা থেকে তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল এবং ২০১৪ সালে শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
আরও পড়ুন : ৪৫তম বিসিএস প্রিলির ফল প্রকাশ
দরিদ্রতার কশাঘাতে পিষ্ট ও পড়াশোনা না জানা মা-বাবার সন্তান হওয়ার কারণে শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাকে অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু হার না মানা মানসিকতা ও নিজের প্রতি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস তাকে আজ এতদূর নিয়ে এসেছে।
সফলতার সংগ্রাম আর দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এতদূর আসার পেছনে যাদের অবদান, সেই মা-বাবা, সহধর্মিণী, পরিবার-পরিজন, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব ও কাছের ছোট ভাইবোনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বেলায়েত।
তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুবই খুশি। দীর্ঘ এ যাত্রার বাকি পথটুকুও যেন সফলতার সঙ্গে পাড়ি দিতে পারি, সে জন্য সবার দোয়া চাই।’
তরুণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যত কঠিন সময়ই আসুক, হাল না ছেড়ে সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশলে নিজের স্বপ্নপূরণে অবিরাম ছুটে চললে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ। তবে আমার মা-বাবা পড়াশোনা না জানলেও আমার পড়ার বিষয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন। তাই তো তারা ক্ষুদ্র এ দোকান হতে যেটুকু আয় হতো তা দিয়ে কষ্ট করে চলার পাশাপাশি আবার আমার জন্য কিছু রাখতেন। মাঝে মাঝে আত্মীয়স্বজনদের নিকট হতে ধারও করতে হতো। তাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল আমার ক্যাডার হওয়া।’
স্থানীয় সুলতান সরদার বলেন, বেলায়েত হোসেন ইমরোজের প্রতিটি কাজ সুন্দর ও সুচারুভাবে শেষ করেন। ও ওর বাবার সঙ্গে কাজের পাশাপাশি নিজের লেখাপড়া শেষ করে আজ একজন বিসিএস ক্যাডার। দোয়া করি ও আরও অনেক বড় হোক।
বেলায়েত হোসেন ইমরোজের বাবা শামসুল তালুকদার কালবেলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। সবসময় ওর প্রয়োজন মতো টাকা-পয়সা ও পরিবেশ আমি দিতে পারি নাই। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
মন্তব্য করুন