শিক্ষা ক্যাডারদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন আগামী ৯ জুন। কিন্তু এর তিনদিন আগে গতকাল নির্বাচনে অংশ নেওয়া একটি প্যানেলের শক্তিশালী প্রার্থীকে বদলি করা হয়েছে। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী। বুধবার (৫ জুন) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে রাজধানীর বিজ্ঞান কলেজে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার রাতে অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীকে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে স্বাক্ষর করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সরকারি কলেজ-২) চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সেটি প্রকাশ করা হয়েছে।
অফিস আদেশ থেকে জানা যায়, শাহেদুল খবির চৌধুরীকে ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এত দিন তিনি মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমকে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শাহেদুল খবির বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি। আগামী ৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও তিনি ফের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। গ প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র তিনদিন আগে তাকে বদলি করায় সবাই এটি নিয়ে কানাঘুষা করছেন। তবে ঠিক কী কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের তিন দিন আগে এক প্যানেলের সভাপতি প্রার্থীকে বদলি করা শিক্ষা প্রশাসনের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। তারা অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত। মূলত অন্য একটি বিশেষ প্যানেলকে ‘বাড়তি’ সুবিধা দেওয়ার জন্যই তড়িঘড়ি করে এমন অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
এদিকে মাউশি সূত্র জানায়, নির্বাচন ছাড়াও মাউশির মহাপরিচালক পদের প্রার্থী হিসেবে শাহেদুল খবির চৌধুরীর নাম আলোচিত হওয়া, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা ক্যাডারের দাবি-দাওয়া আদায়ে তার আপসহীন ভূমিকাও অনেকে ভালোভাবে নেননি। এর প্রভাবও রয়েছে বদলির ক্ষেত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আসন্ন শিক্ষা ক্যাডারদের নির্বাচনে গ প্যানেলের জোয়ার শুরু হওয়ায় অনেকেই ভীত ছিলেন। শিক্ষা ক্যাডারদের বিভিন্ন সমস্যায় পাশে ছিলাম বা সামনেও থাকব, এটা অনেকেরই পছন্দ নয়। তারাই প্রভাব বিস্তার করে এই বদলির ব্যবস্থা করে থাকতে পারেন। তবে আসন্ন নির্বাচনে এই বদলি কোনো ফেলবে না। কারণ আমরা দমে যাচ্ছি না।
মাউশির মহাপরিচালক হওয়ার আলোচনায় থাকায় কী এমন বদলি হয়ে থাকতে পারে কি না- জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল মাউশির মহাপরিচালক হিসেবে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এর আগেও তিনি প্রায় দুই বছর মাউশির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
এ বিষয়ে মাউশির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মূলত শিক্ষা প্রশাসনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি ও সাবেক কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার ‘বিশেষ আগ্রহে’ নির্বাচনের তিন দিন আগে এমন বদলির ঘটনা ঘটেছে। মূলত যারাই শিক্ষা ক্যাডারদের দাবির বিষয়ে আওয়াজ তুলবে, তাদেরই এভাবে বদলি করে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন