ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রত্যয় স্কিম বাতিলে ঢাবি শিক্ষক সমিতির আল্টিমেটাম 

প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধনে শিক্ষকরা। ছবি : কালবেলা
প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধনে শিক্ষকরা। ছবি : কালবেলা

চলতি মাসের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয়’ স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা না হলে আগামী ২৮ মে ও ৪ জুন কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। যদি এতেও দাবি না মানা হয় তাহলে জুনের ছুটি ও বাজেট ঘোষণার পর আগামী ১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার (২৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই ঘোষণা করা হয়।

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা খাতে বিনিয়োগকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাজেটে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা খাতের বাজেটকে কাটছাঁট করা হচ্ছে। তাই শিক্ষকরা আজ পাঠদান ছেড়ে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ২৮ মে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আগামী ৪ জুন সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। আমরা আমাদের ওপর আরোপিত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের প্রত্যাহার চাই। অন্যথায়, শিক্ষকরা বৃহত্তম আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। এ পেনশন স্কিম বাতিলে ১ হাজার ৬১ জন শিক্ষক স্বাক্ষর দিয়েছেন। তারা কেউ এই ধরনের বৈষম্যমূলক স্কিম গ্রহণ করবেন না। শিক্ষকরা নিজেদের আত্মপরিচয় ও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচেন। সেটি যখন সমস্যায় পড়ে যায়, তখন আমাদের প্রতিবাদ করতে হয়। যারা আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কারিগর, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাদের দিকে বিশেষ নজর দিবেন বলে আমরা আশাবাদী।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, এই পেনশন স্কিমে পারিবারিক সুরক্ষাবলয়কে কর্তন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে মেধাবী যারা আসবেন, তাদের আমরা আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে খুঁজে পাব কি না জানি না। যদি আমাদের দাবি আগামীকালের মধ্যে মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা আগামী ২৮ মে সকাল ১০টা থেকে ১২টা অবধি ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করব।

তিনি বলেন, দাবি না মানা হলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সকল শিক্ষকের ম্যান্ডেট নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। যদি ৩ জুনের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হয়, তাহলে আমরা আগামী ৪ জুন আবারও শিক্ষকরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালন করবে। তবে এসব কর্মসূচিতে পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যেহেতু জুন মাসে বাজেট ঘোষণা হবে, তাই আমরা জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এ সময়ের মধ্যেও যদি দাবি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে আগামী ১ জুলাই থেকে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো, তখনকার কর্মসূচির আওতায় পরীক্ষাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, সার্বজনীন পেনশন ঘোষণার প্রথম দিকে যে চারটি পেনশন স্কিম ঘোষণা করা হয়েছিল সেখানে প্রত্যয় স্কিম ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা যেখানে একটি পেনশন স্কিমের মধ্যে রয়েছে, সেখানে নতুন করে একটি পেনশন স্কিম চালু করা হলো, এটা আমরা জানি না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর সুন্দর পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে এই প্রত্যয় স্কিম চালু করা হতে পারে বলে আমরা মনে করছি। তাই, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাই।

টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আজকে প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজপথে নেমে এসেছেন। তাদের রাজপথে নামিয়ে আনাই কি প্রত্যয় স্কিমের উদ্দেশ্য? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে অর্থনীতিবিদরা একটি সমীক্ষা করেছেন, সেখানে দেখানো হয়েছে এই প্রত্যয় স্কিম কীভাবে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বলা হচ্ছে, পহেলা জুলাইয়ের পরে যাদের নিয়োগ হবে তাদের জন্য এটি কার্যকর হবে। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা প্রমোশন হচ্ছে নতুন নিয়োগ। স্কিমটি এখন পর্যন্ত যে অবস্থায় আছে সেক্ষেত্রে প্রতি নিয়োগেই এই স্কিম বাস্তবায়িত হবে। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে ঢাবিসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন ও ড. এম ওহিদুজ্জামান, কলা অনুষদের ডিন ড. আবদুল বাছির, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. গোলাম রব্বানী, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শাহ কাওসার মুস্তফা আবুলউলায়ী বক্তব্য প্রদান করেন।

এ ছাড়া, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী, কবি জসীম উদদীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহীন খান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনসহ বিভিন্ন অনুষদ ডিন, হল প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বন্যাকবলিত সিলেটে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে পানির সংকট চরমে 

রোনালদোদের বিদায় করে সেমিতে ফ্রান্স

যে কারণে স্পেনের বিপক্ষে জার্মানিকে পেনাল্টি দেওয়া হয়নি

সিলেটে সাড়ে ২৮ লাখ টাকার মাদক জব্দ

দল সেমিতে গেলেও ইউরো শেষ পেদ্রির

জনগণের সেবক হয়ে উন্নয়নের কাজ করতে চাই : জনপ্রশাসনমন্ত্রী 

বগুড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ছয়টি পয়েন্টে ১০৬২ মিটার ঝুঁকিপূর্ণ

বেলাবতে চায়না কারখানায় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৬

ক্রুসকে অবসরে পাঠিয়ে সেমিফাইনালে স্পেন

১০

তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ, শতাধিক বসতভিটা বিলীন

১১

কোটার বিরুদ্ধে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল

১২

কোটাবিরোধী আন্দোলন / ক্লাস বর্জনের ডাক দিচ্ছে জবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা 

১৩

ওয়ান বাংলাদেশের সন্মিলনে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রত্যয়

১৪

দাবাকে ভালোবেসে, দাবার কোর্টেই প্রাণ

১৫

নিষিদ্ধ ভয়ংকর অস্ত্র বানাচ্ছেন পুতিন, টার্গেট কে?

১৬

চিনিকলের আধুনিকায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এস আলম গ্রুপের

১৭

আ.লীগ নেতা বাবুল হত্যা, বাঘার পৌর মেয়র ঢাকায় গ্রেপ্তার 

১৮

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর

১৯

মহাকাশেও থামানো যাচ্ছে না ইরানকে

২০
X