স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশাল ‘পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এতে যুক্ত হয়ে ছাত্রলীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি দুই শিক্ষার্থী।
সোমবার (৬ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিশাল এক মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সমাবেশ আয়োজন করে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে ফিলিস্তিনি নাগরিক ইসহাক আহমেদ নামে একজন বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং আমাদের সঙ্গে সংহতি পোষণ করার জন্য আপনাদের সবাইকেই ধন্যবাদ জানাই। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য পুরো বিশ্বের যে বা যারা কথা বলছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি এক ছাত্র সংগঠনের প্রধান নেতা ও বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ অধ্যয়নরত আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বাদাওয়ী বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিনিয়ত আমাদের ফিলিস্তিনের নারী ও শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আমাদের স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশকে, ছাত্রলীগকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।
কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর হাতে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবি ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ সংবলিত ব্যানার ও প্লাকার্ড হাতে নিয়ে পদযাত্রা ও সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যায়। পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, স্টপ জেনোসাইড’; ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জয় জয় ফিলিস্তিন’; ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমাদের এই ছাত্র আন্দোলন আর দেশীয় গণ্ডির ভিতর সীমাবদ্ধ নেই। সীমান্ত বেরিকেড, ভাষার ব্যবধান সবকিছু মুছে দিয়ে একাকার হয়ে গেছে যুদ্ধ-মুক্ত, ন্যায় ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। আমাদের এই ছাত্র আন্দোলনে সমবেত হয়েছেন নির্যাতিত নিষ্পেষিত ফিলিস্তিনের বন্ধুরাও। আমাদের পূর্বপুরুষরা নিজেদের দেশের মুক্তির জন্য বীরত্বের সঙ্গে যেভাবে লড়াই করেছে ঠিক তেমনি আমরাও ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের পাশে দাঁড়াব।
তাছাড়া, এসময় সাদ্দাম হোসেন ইংরেজিতে একটি শান্তি স্মারক পড়ে শোনান। এর একাংশে বলা হয়, সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে ন্যায়বিচার, শান্তি এবং সংহতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারে অটুট আশার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে। আজ, যখন ফিলিস্তিনের ভূমিতে সূর্য অস্তমিত হচ্ছে, এর জনগণের হৃদয়ে অন্যায়ের ছায়া ফেলেছে, আমরা ইসরায়েলের গণহত্যামূলক শাসনের যুদ্ধের অবসান এবং প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। দীর্ঘ সময় ধরে, ফিলিস্তিনি জনগণ একটি নৃশংস দখলদারত্বের শিকার হয়েছে, তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন নিপীড়নের শৃঙ্খলে বেঁধেছে। গাজার ধ্বংসস্তূপযুক্ত রাস্তা থেকে পশ্চিম তীরের জলপাই গাছ পর্যন্ত, ক্ষমতার করিডোরে নিপীড়িতদের আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হয়, যা তাদের যন্ত্রণার জন্য প্রায়শই বধির একটি বিশ্ব শুনতে চায়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর সৈকত এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন