বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ৫২ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় কুমার ভার্মা, সেনা সদর দপ্তরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল মো. মজিবুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাহার অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইশারায় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের এই ঘটনা বিরল। এটি বঙ্গবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্ব ও দূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধু ও মিসেস গান্ধীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়েছিল।
তিনি ভারতকে বাংলাদেশের শর্তহীন অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের প্রয়োজনে ভারত সর্বদা পাশে থেকেছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিরাজমান এই সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিরাজমান ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের অনেক সৈন্য জীবন দিয়েছেন। দুদেশের জনগণের মধ্যে বিরাজমান মৈত্রীর এই বন্ধন চিরদিন অটুট থাকবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অসাধারণ দক্ষতার কারণেই অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। এর মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি পর্ব সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হই। সৈন্য প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানও তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
ইতিহাসের এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ঘটনা দুদেশের বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভারত এবং বাংলাদেশের এই সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা বর্তমানে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিনি ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ৫২ বছরপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাধীনতা পদকপ্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক, পদ্মশ্রী) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন।
মন্তব্য করুন