সদ্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকে ধ্বংস করেছেন- এমন অভিযোগ তুলে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে তার বিচার দাবি করেছেন ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। এরপর কামাল আহমেদ মজুমদারের বক্তব্যের প্রতিবাদে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিভাবকরা।
তাদের দাবি, কামাল আহমেদ মজুমদার নিজেই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করার টার্গেটে নেমেছেন। এ লক্ষ্যে অবৈধ ট্রাস্ট গঠনে এত তোড়জোড় তার। যার কারণে তিনি শিক্ষকদের এমপিও’র টাকা তুলতে দিচ্ছেন না। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে তার নামে ট্রাস্ট করার পাঁয়তারা করছেন। যে কারণে অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের অভিভাবক পরিষদের সভাপতি একলিমুর রেজা কোরাইশ।
এতে অভিযোগ করা হয়, একটি কুচক্রী মহল কয়েক বছর ধরেই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে। পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্যই সাজানো হয়েছে অপতৎপরতার ছক। এর অংশ হিসেবে এমপিও বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটি ট্রাস্টের অধীনে নেওয়ার অপতৎপরতা চলছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে অস্থিরতা বিরাজ ছাড়াও পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ও অনিয়ম রোধে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে থাকা বারণ রয়েছে। এ কারণে তিনি তার মেয়ে রাশেদা আক্তারকে এখানে সভাপতির চেয়ারে বসান। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলেও তার ওপর নানামুখী চাপ অব্যাহত থাকে। তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরাতে নিজেদের লোক দিয়ে একাধিক রিট করা হয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারিতাও চলেছে। প্রতি বছর পুনঃভর্তি ও বিভিন্ন খাতে অযৌক্তিক ফি আদায়ের বিষয়টি অভিভাবকদের জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে। প্রতি বছর আট হাজার টাকা দিয়ে পুনঃভর্তি করাতে হয় ও বিভিন্ন চার্জও ধার্য করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে বার্ষিক আয় প্রায় শত কোটি টাকার ওপরে। এছাড়া, শিক্ষক নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যে আয় হয় প্রায় আরও কয়েক কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের বয়স আগামী ৯ মার্চ ৬০ বছর পূর্ণ হবে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ নিয়োগ আবশ্যক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো এডহক ম্যানেজিং কমিটি বা পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি না থাকায় এত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কঠিন। তাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে একজন দক্ষ আর্মি অফিসার (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. বা নিয়মিত) অথবা প্রশাসনিকভাবে দক্ষ শিক্ষা ক্যাডারকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।
এক প্রশ্নের জবাবে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বলেছেন কামাল আহমেদ মজুমদার। অথচ এটি একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং নির্বাচন নেই। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। তাই এড-হক কমিটি গঠন করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। স্কুলটিকে ট্রাস্টের অধীনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা ট্রাস্টের অধীনে যেতে চাই না। কেননা ট্রাস্ট থাকলে শিক্ষার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক আলমগীর জামিল, অভিভাবক পর্ষদের সদস্য সচিব মো. লিয়াকত আলী, অভিভাবক ও মিরপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক কবিতা আক্তার, অভিভাবক মোজাম্মেল হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
মন্তব্য করুন