নতুন শিক্ষাক্রমে উপজেলা পর্যায়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরুর কথা ছিল আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের তালিকায় বাইরের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব নাম যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে ৯ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে। সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে একযোগে প্রশিক্ষণ কয়েকদিন কয়েকদিন পিছিয়ে শুরু যেতে পারে। তবে প্রশিক্ষণ স্থগিতের আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।
বুধবার রাতে মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) বেলাল হোসাইন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিঃসন্দেহে হবে। তবে ৯ ডিসেম্বর শুরু হবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে। এটা নিয়ে স্কিম ডিরেক্টর ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি যেটুকু জানি, যাচাই-বাছাইয়ে কিছুটা সময় লাগবে। সে কারণে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হতে কিছুটা দেরি হবে। তবে সেটা খুব বেশি দেরি নয়।
এ বিষয়ে মাউশির ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী কালবেলাকে বলেন, আমাদের শিক্ষক প্রশিক্ষণ ৯ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে, যেহেতু সরকারির বাইরে বেসরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, সেজন্য আমরা শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছিলাম। যে তালিকা আমরা হাতে পেয়েছি, তাতে যাদের নাম আছে; সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী শিক্ষকের সংখ্যাটা অতিরিক্ত মনে হচ্ছে।
৫ লাখ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যাদের সবাই শিক্ষক নন। শিক্ষকদের বাইরেও কিছু লোক তালিকায় ঢুকে পড়েছে। এটা নিয়েই মূলত জটিলতা। তালিকাটা এখন আমরা যাচাই-বাছাই করছি।
তিনি বলেন, ৫ লাখ শিক্ষকের তথ্য যাচাইয়ে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে। এরপর প্রশিক্ষণ শুরু হবে। সেজন্য প্রশিক্ষণ শুরুর সময়টা দুয়েকদিন পেছাতে পারে।
এদিকে, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ইস্যু করা একটি চিঠি উপজেলার স্কুল-মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা পর্যায়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। মাউশির নির্দেশনায় এ চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফকির জাকির হোসেন বলেন, ওই চিঠি আসলে অফিসের কর্মকর্তা ভুলক্রমে দিয়ে ফেলেছেন। আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাইনি।
‘ভুলক্রমে লেখা’ চিঠিটি প্রস্তুত করেছেন সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আসাউদ জামান। তিনি বলেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের মৌখিকভাবে শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেছানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল। আমরা যেহেতু আগেই ৯ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ শুরু হবে উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছিলাম, সেজন্য আরেকটি চিঠি দিয়ে ফেলেছি। মূলত এটা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা আসেনি। এজন্য আমরা দুঃখিত।
সাটুরিয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসই এমন চিঠি ইস্যু করে স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধানদের কাছে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নতুন শিক্ষাক্রমে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, কেউ যদি এমন নির্দেশনা দেন, সেটি তারা নিজেরা দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ স্থগিতের বিষয়ে কোনো লিখিত নির্দেশনা আমরা দেইনি।
জানা গেছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেণি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ৯-১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলার কথা ছিল। প্রথম পর্যায়ে ইআইআইএনধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রশিক্ষণের কথা রয়েছে। জানুয়ারি মাসে সুবিধাজনক সময়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ইআইআইএনবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।
এরও আগে ১ ডিসেম্বর থেকে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেণি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পেছেনো হয়।
মন্তব্য করুন