চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাঁচ বছর স্কুলে না গিয়েও বেতন তোলেন প্রধান শিক্ষক

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়ে বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। ছবি : কালবেলা
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়ে বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। ছবি : কালবেলা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগ ওঠেছে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসগর আলী স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও অফিস সহকারী ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে হাজিরা খাতা বাসায় নিয়ে স্বাক্ষর করেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয় আর এমপিওভুক্ত হয় ২০০০ সালে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৬০ জন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আসগর আলী। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই আহসান হাবিব ও তার আপন ভাতিজা সহকারী প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ।

২০১৮ সালে স্কুলের পাশে দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর থেকে আর স্কুলে আসেন না তিনি।

সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে ক্লাস রুমগুলো। নেই বিদ্যালয়ের কোনো সাইনবোর্ডও। বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাসরুমে গিয়ে দেখা মেলেনি শিক্ষকের। ক্লাসে বসে গল্প করছে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রছাত্রী।

ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাদের প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তারা বলে, স্যারকে কোনোদিন স্কুলে দেখিনি। তবে স্যারকে আমাদের বাসার ওইদিকে নিয়মিত দেখতে পাই। এ সময় তাদের ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে তারা বলতে পারেনি। তারা জানায়, তাদের রোল দেওয়া হয়নি। তাদের হাজিরাও নেওয়া হয়নি।

এ সময় অফিস রুমে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সহকারী এক শিক্ষক জানান প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেননি। কেন স্কুলে আসেনি জানতে চাইলে বলেন, আমরা কিছু জানি না। প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তা নেই বলে জানান শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জুঁই আক্তার বলে, আমার বাড়ির কাছেই হেড স্যারের বাসা। কিন্তু স্যারকে কোনোদিন স্কুলে দেখিনি। খালি জানি আসগর আলী স্যার আমাদের স্কুলের হেড স্যার।

জুঁই আক্তারের কাছে তার ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে তার ক্লাস রোল বলতে পারেনি। সে বলে আমাদের তো রোল দেয়নি। আর আমরা যে স্কুলে আসি আমাদের হাজিরা হয় না।

একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী শির্মল সরেন বলেন, হেড স্যারকে আমরা স্কুলে কখনো আসতে দেখিনি। বাইরে দেখি কিন্তু কী কারণে স্কুলে আসে না তা তো আমরা জানি না।

বিদ্যালয়ের দপ্তরি মহেশ্বর রায় বলেন, হেড স্যার দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না। কী কারণে আসেন না, তা আমি বলতে পারব না।

বিদ্যালয়ের সহকারী হিন্দুধর্মীয় শিক্ষক শচীন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ে আসে না। বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর মামলা হয়। তারপর থেকে আর স্কুলে আসেন না।

বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, মামলার বিষয়টি সামনে এনে ওনি স্কুলে আসেন না। স্কুলের সভাপতি তার আপন বড় ভাই ও সহকারী প্রধান শিক্ষক তার ভাতিজা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে না আসলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আসগর আলী বলেন, স্কুলের পাশে আমার ব্যক্তিগত জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের পাশে দুর্গাপূজা মন্দির কমিটির সঙ্গে বিবাদ হলে বিভিন্ন মামলা হয়। সে সময় আামার বিরুদ্ধে তারা মূর্তি ভাঙার মামলা দেয়। বিদ্যালয়ের পাশে মন্দির হওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দেয় যে স্কুলে আসলে আমার বিরুদ্ধে তারা আরও মূর্তি ভাঙার মামলা দেবে তাই আমি স্কুলে না গেলেও স্কুলের যাবতীয় কাজ করি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই আহসান হাবিবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী ইকবাল হোসেন বলেন, রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবক আমাকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি প্রধান শিক্ষক ২০১৮ সাল থেকে স্কুল আসে না। কিন্তু নিয়মিত বেতন তোলেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেছিলাম। ওনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কী যে ব্যবস্থা নিলেন প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসে না।

চিরিরবন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার অফিসে স্কুলে প্রয়োজনীয় কাজে নিয়মিত আসে। তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। ওনি যে ২০১৮ সাল হতে স্কুল করে না সে বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আপনাকে অবগত করেছিলেন তখন কী কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, সে বিষয়টি নিয়ে তখন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে এসব মতবিরোধ থাকতে পারে ভেবে তখন সেটা তদন্ত করে দেখা হয়নি। এখন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ঘুষের রেট নির্ধারণ’ নিয়ে সভা

বিচারকের জুতা চুরি করা সেই চোর কারাগারে

অফিসে আগে আসতে বাধ্য করায় বসের বিরুদ্ধে মামলা, অতঃপর...

‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে মানবিক-বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া হবে’

বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট ভাগ্যবান : প্রধান উপদেষ্টা

জবিসাসের ইফতারে এক ছাতার নিচে সব ছাত্র সংগঠন

বামদের মিথ্যাচার নিয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের বিবৃতি

ঐক্য ধরে রেখে আগামী নির্বাচনে জনগণকে নিয়ে কাজ করতে হবে : নীরব

শিশু ধর্ষণের ঘটনা টাকায় মেটানোর অভিযোগ কৃষক দল নেতার বিরুদ্ধে

এবি পার্টির গণ ইফতারে বক্তারা / অবিলম্বে আছিয়ার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে

১০

উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ না পেলে ঈদের নামাজ পড়বেন না সিরাজ

১১

বাজেট বরাদ্দে জবি পূর্বের তুলনায় অগ্রাধিকার পাবে : ইউজিসি চেয়ারম্যান

১২

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত

১৩

জয়পুরহাটে জিয়া পরিষদের সভাপতি হলেন ‘আ.লীগের সক্রিয় কর্মী’

১৪

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে : বিএসইসি চেয়ারম্যান

১৫

ঢাবির জাতীয়তাবাদী চারুশিল্পীদের ইফতার মাহফিল

১৬

গাজায় নৃশংসতার প্রতিবাদে ইসরায়েলি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান পাকিস্তানি স্থপতির

১৭

থামেনি শিশু আছিয়ার বাড়ির শোকের মাতম, পুড়েছে ধর্ষকের ভিটা

১৮

ট্রেন অপহরণের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

১৯

নির্বাচন দ্রুত ও দেরিতে হবে কেন, জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানালেন ড. ইউনূস

২০
X