জুলাই-আগস্টের গৌরবময় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ‘তথাকথিত আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের গণেশ চন্দ্র রায় সাহস। এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। এই ব্যক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, জাতীয় ঐক্য বিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা। যদিও এই বক্তব্যের জন্য ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন সাহস।
সোমবার (২১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ঢাবি শাখা শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান বলেন, জুলাই বিপ্লব ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসর ব্যতীত বাংলাদেশের সব মত ও পথের মানুষকে একত্রিত করেছিল। পিলখানা থেকে শাপলার গণহত্যা, জাতীয় নেতাদের বিচারিক হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন এবং অবিচারের ভয়াবহ সে সংস্কৃতি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি এদেশে কায়েম করেছিল তার বিপরীতে বাংলাদেশের মানুষ তার অধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে।
ছাত্রদলের এমন বক্তব্য শহীদদের রক্তকে অপমান, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারী গাজীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে খাটো করে দেখার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
ছাত্রশিবির নেতারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ ও ছাত্রসমাজের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও গণমুখী সংগ্রামকে আওয়ামী বাকশালীদের মতো অপমানসূচক শব্দ ব্যবহার করে হেয় প্রতিপন্ন করার ধৃষ্টতা দেখানো অন্যায্য ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। ছাত্রদলের কাছ থেকে আমরা আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।
এদিকে, ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি সাহস তার এমন বক্তব্যের জন্য ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। সোমবার রাত এগারোটার দিকে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বক্তব্যের একটি পর্যায়ে তথাকথিত শব্দটি অনেকটা অসাবধানতা বশত ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলন’ কথাটির আগে আমি উচ্চারণ করেছি। এই বিষয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কারণ এ বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় আমার আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আমার অনাকাঙ্ক্ষিত এই কথাটি সেই আবেগের জায়গায় যদি আঘাত দিয়ে থাকে আমি সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজনীতির ‘র’ বোঝে না, এমন মন্তব্যের জন্যও ক্ষমা চেয়েছেন গণেশ। একই ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় রাজনীতির অনেক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়নি, কেনো না ফ্যাসিবাদের আমলে সে পরিবেশ ছিলো না। কিন্তু অসাবধানতাবশত বলে ফেলেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় রাজনীতির ‘র’ নিয়েও মাথা ঘামায় না। আমি আমার বক্তব্যে অসাবধানতাবশত এ বাক্যটি বলেছি। আমি এ বাক্য দ্বারা কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন তুলিনি এবং আমি আমার পুরো রাজনৈতিক জীবনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরকম মনোভাব কখনো কোথাও পোষণ করিনি। বরং আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট ধারণ করি এবং আজীবন তা ধারণ করার জন্য বদ্ধপরিকর। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার এই কথায় কেউ মনোক্ষুণ্ণ হয়ে থাকলে৷ তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।’
উল্লেখ্য, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার বিচার দাবিতে সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক মানববন্ধন করে ঢাবি শাখা ছাত্রদল। সেখানে বক্তব্য প্রদানের সময় এসব বিতর্কিত মন্তব্য করেন শাখা সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।
মন্তব্য করুন