নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার একটি গ্রামীণ জনপদের একজন মেধাবী ছাত্র জাহাঙ্গীর হোসেন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে অনেক বড় হবেন, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবেন সমাজে। কিন্তু স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এক নির্মম বাস্তবতা- অর্থাভাব।
এসএসসি পরীক্ষার আগে যখন তার বন্ধুরা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন জাহাঙ্গীর দিনের পর দিন দুশ্চিন্তায় কাটায়। বিদ্যালয়ের কিছু বকেয়া ফি পরিশোধ করতে পারেনি জাহাঙ্গীর৷ এজন্য প্রবেশপত্র পায়নি সে৷ পরিবারের অবস্থা এমনই, যেখানে প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করাই কঠিন, সেখানে বিদ্যালয়ের বকেয়া শোধ করা তো বিলাসিতা।
অবশেষে পরীক্ষার একদিন আগেই এই দুঃখের খবর পৌঁছে যায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের কানে। তিনি দেরি না করে খোঁজ নিয়ে বুঝে ফেলেন বিষয়টির গুরুত্ব। এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই তিনি ঘোষণা দেন- জাহাঙ্গীরের বকেয়া ফি তিনিই পরিশোধ করবেন।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের বকেয়া পরিশোধ করে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের ব্যবস্থা করে দেন নাছির। আর সেই সকালটা- যেদিন জাহাঙ্গীর স্কুল ইউনিফর্ম পরে হাতে কলম নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে হাজির হয়- সেটা যেন তার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল সকাল।
পরীক্ষার দিন সকালে হাসিমুখে জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, আমার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় দিন আজ। আমি কৃতজ্ঞ নাছির ভাইয়ের কাছে। উনি না থাকলে আমি হয়তো আজ ঘরে বসে কাঁদতাম। এখন আমি স্বপ্ন দেখি আবার, সেই পুরোনো স্বপ্ন- মানুষের মতো মানুষ হবো, সমাজ বদলাবো।
নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমি শুধু একজন ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছি। আজ সে পরীক্ষা দিচ্ছে- এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার। শিক্ষা যেন কখনো অর্থের কাছে হেরে না যায়, সেটাই আমার কামনা।
জাহাঙ্গীরের গল্প একটি প্রেরণার গল্প- যেখানে এক টুকরো সহানুভূতি বদলে দেয় একটি জীবনের গতিপথ। তাকে দেখে বোঝা যায়, আলোর পথ সবসময় খোলা থাকে, শুধু দরকার কেউ একজন যেন সেই পথে আলো জ্বেলে দেয়।
মন্তব্য করুন