ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কথিত প্রলয় গ্যাং সদস্যের হাতে নির্যাতনের শিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলভী আরসালান এখন উল্টো সেই গ্যাং সদস্যদের করা মামলার আসামি। শুধু এই ছাত্রকে নয়, ছাত্রের মা এবং ছাত্রের সঙ্গে থাকা বান্ধবীকেও আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে এই শিক্ষার্থীর মা কারাগারে আছেন আর এই শিক্ষার্থী এবং তার বান্ধবী আছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে।
২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে তৈরি কথিত প্রলয় গ্যাংয়ের হাতে নির্যাতনের শিকার হন আলভী। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থীর মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসালটেন্ট ডা. রেহানা আক্তার। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আসামীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।
গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব সেই ঘটনায় উল্টো ডা. রেহেনা, তার সন্তান আলভী এবং সেদিন আলভীর সাথে থাকা এক বান্ধবীর নামে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন এবং তাহমিদ ইকবাল মিরাজ। এই তিনজনই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলায় আসামি।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আলভী এবং তার পিতা অধ্যাপক ডা. মীর মোশাররফ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী ও যুগ্ম সদস্যসচিব মাহবুবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রলয় গ্যাং সদস্যদের সেই মামলায় ডা. রেহেনাকে গ্রেপ্তার করে কয়েকদিনের মধ্যে আরও কয়েকটা মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। একমাসেরও বেশি সময় ধরে ডা. রেহেনা কারাগারে আছেন। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচার চান।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর পিতা ডা. মীর মোশাররফ বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি চেম্বার থেকে আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। আর আমার ছেলে এবং তার বান্ধবীকে খুঁজতে বাসায় যায় পুলিশ। এখন তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাসায়ও থাকতে পারছে না।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনই মানুষকে মাপার একমাত্র টেস্ট। সেই আন্দোলনে আমাদের পরিবার অংশগ্রহণ করেও আজ মিথ্যা মামলায় আমার স্ত্রীকে জেল খাটতে হচ্ছে আর সন্তানকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশার বিষয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আলভী বলেন, আমার আম্মুর পা ভাঙা থাকায় নিজে আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করতে পারলেও নিজের দুই ছেলেকে মাঠে নামিয়েছে। এখন আমার মা জেলে, আমরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। আমাদের আন্দোলন ছিল ন্যায়বিচারের জন্য। অথচ এখন আমরাই অন্যায়ের শিকার হচ্ছি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলার আসামী এবং পাল্টা মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব অভিযোগের বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, এই অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের করা মামলাটাই সত্য। ডা. রেহেনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। সেসময় পুলিশ আমাদের কোন কথা শোনেনি। তাই আমরা এখন মামলা করেছি।
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে নাজমুস সাকিব বলেন, হলে থাকতে হলে সবাইকেই ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়েছে। সেভাবেই আমরা ছিলাম।
মামলার বিষয়ে জানতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুরকে ফোন দেওয়া হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, আপনি যাদের ব্যাপার ফোন দিয়েছেন সেই মা ও ছেলে ফ্যাসিস্টের দোসর। এসময় তিনি এই প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে ডা. রেহেনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন এমপি মন্ত্রীর গ্রুপ ছবি পাঠান এবং ছেলে আলভীর একটি স্ক্রিনশট পাঠান যেখানে দেখা যাচ্ছে আলভী একজন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা দিচ্ছেন। কয়েকটি ছবি ২০২৪ সালের শুরুর দিকের এবং আগের বছরের।
এসব ছবি কোনো অপরাধের প্রমাণ না, যেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সেসব মামলার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেসবও আছে। তবে এগুলো তদন্তের স্বার্থে আমরা প্রকাশ করবো না।
গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের করা তদন্ত কমিটি এই ডাক্তারের সংশ্লিষ্টতা পায়নি জানালে তিনি বলেন, তারা কেন পায়নি সেটা আমরা জানি না। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে তিনি জড়িত থাকতে পারেন তাই উনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন