জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে এক বছরের কারিগরি প্রযুক্তি শিক্ষা চালুর চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সচিবালয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইরাব) নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রামে-গঞ্জে অনার্স-মাস্টার্স দেওয়া হচ্ছে। কিছু ভালো তো আছে, অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে সেখানে পড়ছে, ভালোও করছে। কিন্তু সার্বিকভাবে কিছু বেকার সৃষ্টি করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মানও সন্তোষজনক নয়। ফলে তারা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে না ফিরে যেতে পারছে তাদের বাবার পেশায়, না পাচ্ছে কোনো চাকরি। এখানে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। যদিও কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা আছে। আমাদের সেগুলো দূর করতে হবে। যখন সবাই দেখবে কলেজে অনার্স পড়ানোর চাইতে কারিগরিতে পড়লে একটা কর্মসংস্থান হবে, তখন কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী হবে। এর জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের অনার্স কোস ও পাস কোর্স তিন বছরের আছে। এখানে এক বছর করে কারিগরি প্রযুক্তি শিক্ষা দিতে চাই। এটা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ অন্যদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। কীভাবে এটা প্রয়োগ করা যায় সেটি নিয়ে চিন্তা করছি। শিগগিরই আমরা এ বিষয়টি নিয়ে বসব। কারণ, এখানে এক বছরের একটি কোর্সের একটা সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে গিয়ে অনেকে ভালো চাকরি পেতে পারে। দেশে ভালো কিছু করতে পারে, দক্ষতা অর্জন করে। সে উদ্যোগটাই নেওয়া হবে।
কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে সচিব বলেন, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে আমার কিছু স্বপ্ন রয়েছে। কারিগরি শিক্ষা ছাড়া দেশের এত বেশি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব নয়। তাই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা উন্নতি করতে পারব না। পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তাদের বড় একটা অংশ সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াতে চান। কাজেই তাদেরও মাইনাস করে আমরা চলতে পারব না।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার করুণ হাল, অনেক মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোকে বাঁচানো দরকার। এ জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর দুটি উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমটি হচ্ছে- স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে এবং কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এসব মাদ্রাসায় বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের জন্য আলাদা প্রজেক্ট করার নির্দেশনা দিয়েছি, তারা একটি ডিপিপি তৈরির প্রক্রিয়া শিগগির শুরু করবেন। এ সময় তিনি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালুর উদ্যোগ ও মিড ডে মিল চালুর প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে বলে জানান।
মতবিনিময় সভায় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) সামসুর রহমান খান, অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) ড. মো. আয়াতুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (অডিট ও আইন) মো. আজিজ তাহের খান, ইরাবের সভাপতি ফারুক হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমানসহ সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন