বিবিসির ২০২৪ সালের ১০০ প্রভাবশালী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকায় স্থান পাওয়া অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের অ্যালামনাই রিকতা আখতার বানুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত সদস্য ও অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজর এবং খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল হক চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব মো. কামরুজ্জামান লিটু এবং ডিপার্টমেন্টের সম্মানিত অ্যাডভাইজর প্রফেসর ডা. মাসুমা আক্তার এবং সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান আরিফ-উজ-জামান খান। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
রিকতা আখতার বানু তারা জীবনের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ও জীবনী শেয়ার করেন। তিনি একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তিনি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন। যেখানে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুকে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়। তিনি বলেন, কীভাবে তার একটি প্রতিবন্ধী বাচ্চাকে যখন কোন স্কুলে ভর্তি নিচ্ছিল না, তখন নিজেই উদ্যোগী হয়ে তার নিজের ও আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের ৬০ জন নিয়ে একটি স্কুল (যেটি রিকতা আখতার বানু প্রতিবন্ধী স্কুল নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে বর্তমানে ৩০০+ প্রতিবন্ধী বাচ্চা পড়াশোনা করে। এখানে পড়াশুনা ছাড়াও তাদের জীবনমুখী শিক্ষা দেওয়া হয়। এইসব বাচ্চাদের মধ্যে অনেকে এসএসসি, এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেল কমপ্লিট করেছেন। এমনকি তার প্রতিবন্ধী মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং গত অক্টোবর মাসে একটি মেয়ে সন্তানের জননী হন। তিনি তরুণদের বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য খাতে রয়েছেন তাদের এইরকম কাজে উদ্যোগী হতে উৎসাহ প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, স্কুলটিতে আবসিক ব্যবস্থা করা হলে অনেক প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে। স্কুলটি প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন স্কুলটি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু-শিক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে থাকে।
প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, ঘরে ঘরে রিকতা আখতার বানুর মতো প্রতিভা ছড়িয়ে আছে। কিন্তু কারও কথা আমরা জানি আবার কারও কথা আমরা জানি না। এগুলো আমাদের জানতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে। তিনি রিকতা আখতার বানুর স্কুলের জন্য তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, রিকতা আখতার বানুর প্রতিবন্ধী স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে পড়ার উপযুক্ত হয়, তাহলে তিনি অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ১০০ শতাংশ স্কলারশিপে পড়ার ব্যবস্থা করে দেবেন।
বিশেষ অতিথি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সদস্য সচিব জনাব মো. কামরুজ্জামান লিটু তার বক্তব্যে রিকতা আখতার বানুকে অভিনন্দন জানান এবং তার কাজের প্রশংসা করেন। ডিপার্টমেন্ট এর অ্যাডভাইজর প্রফেসর ডা. মাসুমা আক্তার তার বক্তব্যে রিকতা আখতার বানুর প্রশংসা করেন এবং তার সঙ্গে তার স্বামীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, তারা অটিস্টিক বাচ্চার জন্য নিজেদের জীবন এবং সম্পদ উজাড় করেছেন। তারা শুধু অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কুড়িগ্রামের গর্ব নয় বরং তারা সারা বাংলাদেশের গর্ব।
সভাপতি প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার জন্য পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টকে ধন্যবাদ জানান। রিকতা আখতার বানুর ধৈর্য সহকারে জীবনের কঠিন সময় অতিক্রম করার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভালো কাজ করার জন্য অর্থ কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। যারা প্রকৃত সমাজ সেবক তার কোনো পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য কাজ করেন না। বাংলাদেশে এরকম অসংখ্য রিকতা আখতার বানুর জন্ম হোক সেই প্রত্যাশা করি।
মন্তব্য করুন