ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ : জড়িতদের অপসারণ ও শাস্তি দাবি

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা। ছবি : কালবেলা
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা। ছবি : কালবেলা

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের দাখিল ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের কভার পৃষ্ঠায় ‘আদিবাসী’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। এ ছাড়া জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ ও শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবিও জানিয়েছে তারা।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ শব্দ প্রত্যাহারের ঘোষণা না এলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে সংগঠনটি। কারণ, তাদের দাবি ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার সংবিধানবিরোধী, বিতর্কিত ও রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো, শিক্ষা মন্ত্রণালয়/সরকার থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রত্যাহার করার ঘোষণা আসতে হবে। নইলে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন শিক্ষার্থীরা; পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ করানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ‘আদিবাসী’ বলা ও প্রচারণাকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; শিক্ষার মানোন্নয়নের নামে দেশের শিক্ষা খাতে বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এনজিও থেকে তহবিল নেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং বৈদেশিক তহবিলে আমাদের শিক্ষার্থীদের মগজ বিক্রি করা যাবে না; দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে ‘শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জনে বিদেশি সংস্থা বা তাদের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের থেকে শতভাগ প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র পরামর্শ ও প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।

সংগঠনের আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, নতুন বছরের দাখিল নবম-দশমের বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইতে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজন খুবই আপত্তিকর, অনাকাঙ্ক্ষিত, সংবিধানবিরাধী ও রাষ্ট্রদ্রোহ কর্ম, যা বিচ্ছিন্নতাবাদের পথ সহজ করবে। কারণ বাংলাদেশে একমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ‘আদিবাসী’ বলে প্রচারণা চালায় ও স্বীকৃতি চায়। তাদের এই প্রচারণা ও স্বীকৃতি চাওয়ার পেছনে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য ছলেবলে-কৌশলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের দেশে ‘আদিবাসী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন একটি তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র ‘জুম্মল্যান্ড’ তৈরি হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সেই পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই ‘আদিবাসী’ শব্দটি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকারকে একটি তদন্ত কমিটি করে অতিদ্রুত এদের চিহ্নিত করে অপসারণ করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ক অনুচ্ছেদে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠী বলা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার নির্দেশনা দেয়। ২০১৯ সালের এক প্রজ্ঞাপনেও ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও সরকারি নির্দেশনা অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করে দেশি-বিদেশি একটা শ্রেণি দেদার বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার ও প্রচার করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ২০০৭ সালের পর থেকে এই প্রচারণা ব্যাপকভাবে চলছে। এর কারণ হচ্ছে, ২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, যাতে এমন কিছু বিতর্কিত অনুচ্ছেদ রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে আদিবাসী অঞ্চলের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও অখণ্ডতা থাকে না। যে কারণে বাংলাদেশ এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেনি।

জিয়া আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বিদেশি প্ররোচনায় ২০০৭ সাল থেকে নিজেদের আদিবাসী দাবি করলেও তাদের দাবি চরম ভণ্ডামি, জালিয়াতি ও মিথ্যা। ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদি নিবাস হচ্ছে মিয়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্র। তারা ওখানকার আদিবাসী বা আদি বাসিন্দা, বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশে তাদের মধ্যে একটা অংশ দখলদার (সেটেলার) যারা দস্যুবৃত্তি করতে করতে অবৈধভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে জোরপূর্বক বাঙালিদের ভূমি দখল করে বসতি শুরু করেছিল। আরেকটা অংশ আশপাশের অঞ্চল থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি শিক্ষার্থী ও ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র মুখপাত্র মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার, রাফসান, সায়েদুল, বায়েজিদসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এ বছর গুচ্ছেই থাকছে বাকৃবি : উপাচার্য ড. এ কে ফজলুল হক

বিএনপির ২২৭৬ নেতাকর্মীকে গুম-খুনের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে

দিনাজপুরে শীতের দাপট, একদিনে তাপমাত্রা কমেছে ৫ ডিগ্রি

সৌদিতে প্রবল বৃষ্টি, মক্কা-মদিনায় রেড অ্যালার্ট জারি

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ক্রম ঠিক করতে আপিল বিভাগে আবেদন

খাগড়াছড়িতে অস্ত্রসহ ২ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অনিশ্চয়তা

অন্ধরাও কি স্বপ্ন দেখেন?

হিমেল বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কুড়িগ্রামে শীতের দাপট

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ শুনানি ২৩ জানুয়ারি

১০

ইসরায়েলের নতুন মানচিত্র প্রকাশ, সার্বভৌমত্বের অস্তিত্ব নেই ৪ দেশের

১১

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক প্যাট্রিক কেনেডির পরিচয়

১২

ট্রাকের পেছনে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত ২

১৩

শৈত্যপ্রবাহের কবলে চুয়াডাঙ্গা, হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু জনজীবন

১৪

জুলাই আন্দোলনে গ্রেপ্তার মুক্তিযোদ্ধার বয়স এজাহারে ৩২

১৫

সাঁওতাল নারীকে মারধরের মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

১৬

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল’ গঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

১৭

বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান কত?

১৮

ছাত্র আন্দোলনে হামলায় ইউপি চেয়ারম্যান রুয়েল গ্রেপ্তার

১৯

বিল দখল নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫০

২০
X