সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক তখন পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। তার এই মৃত্যুতে কোটা আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়, শেষে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের।
গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। কিন্তু পাঁচ মাস না যেতেই তার মৃত্যুর তারিখ ভুলভাবে লেখা হয়েছে মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত নবম ও দশম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এই বইয়ে তার মৃত্যুর তারিখ ১৬ জুলাইয়ের পরিবর্তে লেখা হয়েছে ১৭ জুলাই।
গুলি লাগার মুহূর্তে রাজপথে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের ছবি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মানুষ শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। এ আন্দোলনই রূপ নেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।
এনসিটিবির নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে ‘গ্রাফিতি’ শিরোনামে এক অধ্যায়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হন। তবে একই শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ শিরোনামে যে অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে, সেখানে সঠিক তারিখ অর্থাৎ ১৬ জুলাই লেখা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ্ রাজু বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম হলো আবু সাঈদের শহীদ হওয়া। তার মৃত্যুর আগের একটি ভিডিও সারা দেশে আলোড়ন তোলে। অথচ তার মৃত্যুর তারিখই যদি ভুল হয় তাহলে মনে হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক ঠিকমতো পরিমার্জন হয়নি।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। ওয়েবসাইটে পিডিএফ কপিতে সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে। তবে মুদ্রণ হওয়া যে বইগুলো চলে গেছে, সেগুলোর জন্য সংশোধন কপি পাঠানো হবে। আর যেসব বই ছাপা হয়নি, সেখানে সংশোধন করে ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত বছর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
মন্তব্য করুন